নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জালাময়ি গান শুনতে নিচের লিংকে জান-ক্লিক করুন
Translate
Massage for you
Allah is my lord
মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬
ইসলামীক যত গান এই ঠিকানায়
শেরপুরের কৃতি সন্তান খাঁন মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের লেখা নতুন ইসলামী হামদ-নাত গজল শুনতে ভিজিট করুন ক্লিক
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
বেফাকের ফলাফল
আগামী 29 শে জুন/2016 দুপুর 12.00 মি: বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড ( বেফাক) এর 39 তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষরা ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আলাদা মার্কশিট পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়- ক্লিক করুন
মাদ্রাসাওয়ারী ফলাফল জানতে এখানে ক্লিক করুন
মেধা তালিকা জানতে ক্লিক করুন
শিক্ষার্থীদের আলাদা মার্কশিট পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়- ক্লিক করুন
মাদ্রাসাওয়ারী ফলাফল জানতে এখানে ক্লিক করুন
মেধা তালিকা জানতে ক্লিক করুন
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬
তাওহিদ কাকে বলে?
ভূমিকা: মহাকাশে অবস্থিত অসংখ্যা জ্যোতিষ্কের মধ্যে একটি জ্যোতিষ্ক গ্রহ। আমাদের আবাস্থল এ পৃথিবী মহাকাশের একটি ক্ষুদ্র গ্রহ। এখানে প্রতিদিনই দেখা যায় একই সময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে দিনের পর রাত, আবার রাতের পর দিন আসছে। ঠিক একইভাবে ঋতু পরিবর্তনে আসে শীত ও গ্রীষ্ম এবং ঋতু অনুযায়ী ফোটে নানা ফুল ও ফলে ফল-ফসল। কোনরকম হেরফের ছাড়া প্রকৃতিতে এ নিয়ম পালিত হওয়ার ঘুরচাকা একটা কথায় মনে করিয়ে দেয় যে, বিশ্ব নিয়ন্ত্রা এক ও অদ্বিতীয়।
আভিধানিক অর্থ: তাওহিদ শব্দটি আরবি। এটি মাসদার। ওয়াহিদ বা আহাদ শব্দ হতে উৎপন্ন। সুতরাং তাওহিদ শব্দের অর্থ এক করা, এক হওয়া, একক হওয়া। দ্বিতীয় না থাকা, একক বলে স্বীকার করা ইত্যাদি। তাওহিদ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Monothism'
পারিভাষিক সংজ্ঞা: ইসলামী চিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে তাওহিদকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো:
সুফিবাদীদের মতে, “ বিশ্বজুড়ে আল্লাহর একত্বের উপলব্ধি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। “
দার্শনিকদের মতে, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ হলো সত্তা ও গুণগত দিক দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদ।”
কালামশাস্ত্রবিদগণ তাওহিদের সংজ্ঞায় বলেন, “ আল্লাহতায়ালা সত্তাগত দিক থেকে একক, এ বিশ্বাসের নামই তাওহিদ। “
আবুল হাসান আল আশআরীর মতে, “ তাওহিদ হলো এ ঘোষণা দেয়া যে, আল্লাহ একক এবং একমাত্র সত্তা।”
চলবে------------
আভিধানিক অর্থ: তাওহিদ শব্দটি আরবি। এটি মাসদার। ওয়াহিদ বা আহাদ শব্দ হতে উৎপন্ন। সুতরাং তাওহিদ শব্দের অর্থ এক করা, এক হওয়া, একক হওয়া। দ্বিতীয় না থাকা, একক বলে স্বীকার করা ইত্যাদি। তাওহিদ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Monothism'
পারিভাষিক সংজ্ঞা: ইসলামী চিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে তাওহিদকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো:
সুফিবাদীদের মতে, “ বিশ্বজুড়ে আল্লাহর একত্বের উপলব্ধি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। “
দার্শনিকদের মতে, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ হলো সত্তা ও গুণগত দিক দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদ।”
কালামশাস্ত্রবিদগণ তাওহিদের সংজ্ঞায় বলেন, “ আল্লাহতায়ালা সত্তাগত দিক থেকে একক, এ বিশ্বাসের নামই তাওহিদ। “
আবুল হাসান আল আশআরীর মতে, “ তাওহিদ হলো এ ঘোষণা দেয়া যে, আল্লাহ একক এবং একমাত্র সত্তা।”
চলবে------------
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
যেসব কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে
নিম্নোক্ত দশটি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
1. সফর: সফরে থাকলে রোযা না রেখে পরে কাযা করার বিধান।
2. রোগ: রোগীরা পরে কাযা আদায় করতে পারবে।
3. গর্ভধারণ: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
4. স্তন্যদান। যদি সন্তানের স্তন্য না পাবার আশঙ্খা থাকে তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছ।
5. ক্ষুধা তৃষ্ণার প্রাবল্য: জীবন ওষ্ঠাগত হলে রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
6. বার্ধক্য ও দুর্বলতা: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
7. জীবন নাশের ভয়: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুতি আছে।
8. জেহাদের কারণে:
9. বেহুশ অবস্থায়:
10. মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে।
আরো জানতে ক্লিক করুন
1. সফর: সফরে থাকলে রোযা না রেখে পরে কাযা করার বিধান।
2. রোগ: রোগীরা পরে কাযা আদায় করতে পারবে।
3. গর্ভধারণ: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
4. স্তন্যদান। যদি সন্তানের স্তন্য না পাবার আশঙ্খা থাকে তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছ।
5. ক্ষুধা তৃষ্ণার প্রাবল্য: জীবন ওষ্ঠাগত হলে রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
6. বার্ধক্য ও দুর্বলতা: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে।
7. জীবন নাশের ভয়: এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুতি আছে।
8. জেহাদের কারণে:
9. বেহুশ অবস্থায়:
10. মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটলে।
আরো জানতে ক্লিক করুন
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
সাওম বা রোযা
‘সাওম’ আরবী শব্দ। সাওম বা সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, পুড়িয়ে দেওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনচার থেকে বিরত থাকাকে ‘সাওম’ বা রোযা বলা হয়।
ইহা এমন একটি মাস যে মাসে নাযিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ট গন্থ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ।
বস্তুত, রোযা রাখার রীতি সর্বযুগেই প্রচলিত ছিল। প্রথম নবী আদম আ: থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সকল নবী - রাসূলই রোযা পালন করেছেন। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ: বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিন দিন রোযা রাখার বিধান ছিল। পরে রোযা ফরজ হলে তা রহিত হয়ে যায়।
হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: মদীনায় আগমন করে দেখলেন যে, ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোযা পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার? তোমরা এ দিনে রোযা পালন কর কেন? তারা বলল, এটি অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনী িইসরাইলকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাই মুসা আ: এ দিনে রোযা রাখতেন। এ কথা শুনে রাসূল সা: বলেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসা আ: এর অধিক নিকটবর্তী। তারপর তিনি এ দিন রোযা রাখেন এবং সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দেন। (শামী- 2য় খন্ড, পৃ: 95)
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় হযরত মুসা: আ:, হযরত ঈসা আ: এবং তাদের অনুসারীগণ রোযা পালন করতেন। তবে তাদের সাথে আমাদের রোযার পার্থক্য বিদ্যমান। (চলবে)
ইহা এমন একটি মাস যে মাসে নাযিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ট গন্থ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ।
বস্তুত, রোযা রাখার রীতি সর্বযুগেই প্রচলিত ছিল। প্রথম নবী আদম আ: থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত সকল নবী - রাসূলই রোযা পালন করেছেন। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ: বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিন দিন রোযা রাখার বিধান ছিল। পরে রোযা ফরজ হলে তা রহিত হয়ে যায়।
হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: মদীনায় আগমন করে দেখলেন যে, ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোযা পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার? তোমরা এ দিনে রোযা পালন কর কেন? তারা বলল, এটি অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনী িইসরাইলকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তাই মুসা আ: এ দিনে রোযা রাখতেন। এ কথা শুনে রাসূল সা: বলেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসা আ: এর অধিক নিকটবর্তী। তারপর তিনি এ দিন রোযা রাখেন এবং সকলকে রোযা রাখার নির্দেশ দেন। (শামী- 2য় খন্ড, পৃ: 95)
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় হযরত মুসা: আ:, হযরত ঈসা আ: এবং তাদের অনুসারীগণ রোযা পালন করতেন। তবে তাদের সাথে আমাদের রোযার পার্থক্য বিদ্যমান। (চলবে)
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
আশারা-ই- মুবাশ্শারা
মহান আল্লাহ পাক দশজন সম্মানিত সাহাবাকে দুনিয়াতেই বেহেশতের সুসংবাদ দান করেছেন। তাদেরকে বলা হয় আশারা-ই-মুবাশশারা। এ দশজন হলেন:
1. হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা:
2. হযরত ওমর রা:
3. হযরত আলী রা:
4. হযরত উসমান রা:
5. হযরত যুবাই রা:
6. হযরত তালহা রা:
7. হযরত আবু উবাইদাহ রা:
8. হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রা:
9. হযরত সা’দ ইবনে যায়েদ রা:
10 হযরত সাঈদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস
উপরোক্ত দশজন সাহাবা তাঁদের জীবদ্দশাতেই বেহেশতের শুভ সংবাদ লাভ করেন।
more information
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬
উষ্ঞতম ও শীতলতম
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬
দারুল উলূম দেওবন্দ কখন কোথায় কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলঃ
দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ
( কিন্তি ১)
মানুষের রাহনুামায়ীর জন্য সর্বশেষ ঐশী দিক নির্দেশনা হিসাবে অবর্তর্ণ হয়েছিল আল-কুরআন। রাসূল্লাহ সাঃ এর জীবন ধারায় তারই রূপায়ণ হয়েছিল যথার্থভাবে। আর সে আলোকেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন হযরত সাহাবায়ে কেরামের সুমহান জামা’আতকে। তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দিযে গেছেন যে, সত্য পন্থী, হক ও হক্কানিয়াতের অনুসারী, নাজাতপ্রাপ্ত জামা’আত হবে তারাই; যারা ঈমান ও আমল, ব্যক্তিক ও সামাজিক, দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সকল ক্ষেত্রে “ মা’আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী” অর্থাৎ আমি ও আমার সাহাবীরা যে পথে চলছে সেপথে নিজেদেরকে পরিচালিত করবে এবং সে পথকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করবে। ইসলামে সে জামা’আতই পরিচিতি লাভ করেছে “ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত” নামে।
হযরত সাহাবাযে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি এক জামা’আত কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে “ মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী”র পথকে অনুসরণ করে আসছে। এই মহান ধারার উত্তরাধিকারী আইম্মা, মুজাদ্দেদীন, ফুকাহা, মুহাদ্দেসীন ও সুলাহায়ে উম্মত অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে নিরলস সাধনা, সীমাহীন ত্যাগ ও কুবানীর মাধ্যমে এই দ্বীনের হেফাজত ও ইশা’আত করে গিয়েছেন। সকল প্রতিকূলতার মুখেও হক ও হক্কানিয়াতের পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্য তারা জীবন বাজী রেখে সংগ্রাম করে গেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ মূলতঃ সে ধারারই উত্তরাধিকারী।
ভারতে ইসলাম এসেছে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা: এর যুগেই। সেই থেকে নিয়েই “ মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী”র কেতনধারী এক জামা’আতের নিরলস প্রচেষ্টায় হিন্দু প্রধান ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়। মুসলিম শিক্ষা-সভ্যতা ও কৃষ্টি-কালচার এদেশের মানুষের নিজশ্ব সভ্যতা ও কৃষ্টি-কালচারে পরিণত হয়। এই সুদীর্ঘ পথে মুসলিম মনীষী ও উলামায়ে কিরামকে সমূহ প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে অনেক কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মুকাবেলা করতে হয়েছে অনেকট জটিলতার। কখনো মনে হয়েছে যে, আর বুঝি সামলানো সম্ভব হবেনা। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য বারে বারেই তার নুসরতের দ্বার খুলে দিয়েছেন। রহমতের বারি সিঞ্চন করে সহজ করে তুলেছেন উম্মতে চলার পথ।
মোগল সম্রাট আকবরের যুগে তার মূর্থতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু ব্রাক্ষ্মণ্যবাদীরা যখন ক্ষমতা লোভী সম্রাটের ছত্রছায়ায় নিজেদের কুটিল চানক্য মূতিকে আড়াল করে হিন্দুয়ানী দর্শন উপাদানে গঠিত দ্বীনি ইলাহীর নামে নিঃশেষ করে দিতে চাইল ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলিম উম্মাকে, তখন সেই ধারারই উত্তরাধিকারী এক মর্দে মু’মিন আল্লাহর উপর পরম ভরসা নিয়ে বলিষ্ঠ ঈমানী চেতনায় এগিয়ে এলেন এবং ছিন্ন করে দিলেন তাদের সব ষড়যন্ত্রের জাল। ইতিহাস তাঁকে মুজাদ্দিদে আলফেসানীহিসাবে চিনে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভোগবাদী বস্ততান্ত্রিক দর্শনের উপর ভিত্তি করে বাতিল যখন নিজেকে দাঁড় করাতে চাইল তখন এর মোকাবেলায় হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহ: নববী সুন্নাহর আলোকে ইসলামের সামাজিক, আর্থিক ও নৈতিক সকল বিধি বিধানকে বিশ্লেষণ করে পেশ করলেন ইসলামী জীবন বোধ ও আন্দোলনের এক নতুন রূপরেখা এবং নব্য বাতিলকে রোখার কার্যকরী কর্মসূচী। সেই চেতনায় সমৃদ্ধ ‘মা’ আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী’-
( কিন্তি ১)
মানুষের রাহনুামায়ীর জন্য সর্বশেষ ঐশী দিক নির্দেশনা হিসাবে অবর্তর্ণ হয়েছিল আল-কুরআন। রাসূল্লাহ সাঃ এর জীবন ধারায় তারই রূপায়ণ হয়েছিল যথার্থভাবে। আর সে আলোকেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন হযরত সাহাবায়ে কেরামের সুমহান জামা’আতকে। তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দিযে গেছেন যে, সত্য পন্থী, হক ও হক্কানিয়াতের অনুসারী, নাজাতপ্রাপ্ত জামা’আত হবে তারাই; যারা ঈমান ও আমল, ব্যক্তিক ও সামাজিক, দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সকল ক্ষেত্রে “ মা’আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী” অর্থাৎ আমি ও আমার সাহাবীরা যে পথে চলছে সেপথে নিজেদেরকে পরিচালিত করবে এবং সে পথকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করবে। ইসলামে সে জামা’আতই পরিচিতি লাভ করেছে “ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত” নামে।
হযরত সাহাবাযে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি এক জামা’আত কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে “ মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী”র পথকে অনুসরণ করে আসছে। এই মহান ধারার উত্তরাধিকারী আইম্মা, মুজাদ্দেদীন, ফুকাহা, মুহাদ্দেসীন ও সুলাহায়ে উম্মত অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে নিরলস সাধনা, সীমাহীন ত্যাগ ও কুবানীর মাধ্যমে এই দ্বীনের হেফাজত ও ইশা’আত করে গিয়েছেন। সকল প্রতিকূলতার মুখেও হক ও হক্কানিয়াতের পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্য তারা জীবন বাজী রেখে সংগ্রাম করে গেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ মূলতঃ সে ধারারই উত্তরাধিকারী।
ভারতে ইসলাম এসেছে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর রা: এর যুগেই। সেই থেকে নিয়েই “ মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী”র কেতনধারী এক জামা’আতের নিরলস প্রচেষ্টায় হিন্দু প্রধান ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়। মুসলিম শিক্ষা-সভ্যতা ও কৃষ্টি-কালচার এদেশের মানুষের নিজশ্ব সভ্যতা ও কৃষ্টি-কালচারে পরিণত হয়। এই সুদীর্ঘ পথে মুসলিম মনীষী ও উলামায়ে কিরামকে সমূহ প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে অনেক কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। মুকাবেলা করতে হয়েছে অনেকট জটিলতার। কখনো মনে হয়েছে যে, আর বুঝি সামলানো সম্ভব হবেনা। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য বারে বারেই তার নুসরতের দ্বার খুলে দিয়েছেন। রহমতের বারি সিঞ্চন করে সহজ করে তুলেছেন উম্মতে চলার পথ।
মোগল সম্রাট আকবরের যুগে তার মূর্থতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু ব্রাক্ষ্মণ্যবাদীরা যখন ক্ষমতা লোভী সম্রাটের ছত্রছায়ায় নিজেদের কুটিল চানক্য মূতিকে আড়াল করে হিন্দুয়ানী দর্শন উপাদানে গঠিত দ্বীনি ইলাহীর নামে নিঃশেষ করে দিতে চাইল ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলিম উম্মাকে, তখন সেই ধারারই উত্তরাধিকারী এক মর্দে মু’মিন আল্লাহর উপর পরম ভরসা নিয়ে বলিষ্ঠ ঈমানী চেতনায় এগিয়ে এলেন এবং ছিন্ন করে দিলেন তাদের সব ষড়যন্ত্রের জাল। ইতিহাস তাঁকে মুজাদ্দিদে আলফেসানীহিসাবে চিনে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভোগবাদী বস্ততান্ত্রিক দর্শনের উপর ভিত্তি করে বাতিল যখন নিজেকে দাঁড় করাতে চাইল তখন এর মোকাবেলায় হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহ: নববী সুন্নাহর আলোকে ইসলামের সামাজিক, আর্থিক ও নৈতিক সকল বিধি বিধানকে বিশ্লেষণ করে পেশ করলেন ইসলামী জীবন বোধ ও আন্দোলনের এক নতুন রূপরেখা এবং নব্য বাতিলকে রোখার কার্যকরী কর্মসূচী। সেই চেতনায় সমৃদ্ধ ‘মা’ আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী’-
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬
ঝড়ে পড়লো উজ্জ্বল নক্ষত্র, মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলাম


হাফেজ নূরুল ইসলাম (রহ.) শৈশব হতে লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে পূর্বধলা থানাধীন বালুচরা ফুরকানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতপর তিনি পিতার অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী ঐশী গ্রন্থ আল্-কুরআন হিফ্য শুরু করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া (মাদ্রাসা) হতে ১৯৬৫ ঈসায়ী সনে সুনামের সাথে হিফ্জুল কুরআন সমাপ্ত করে একই মাদ্রাসায় দরসিয়াতে অধ্যয়ন শুরু করে মাত্র ০৪ বছরকাল লেখাপড়া করার পর পারিবারিক সমস্যার কারণে এ মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। তারপর নিজ থানা পূর্বধলার যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় ০৩ বছর (শরহে জামী ও শরহে বেকায়া) অধ্যয়ন করেন। অত:পর দূর্গাপুর থানাধীন চান্দেরনগর দারুল উলুম মাদ্রাসায় ০২ বছর (জালালাইন শরীফ ও মিশকাত শরীফ) অধ্যয়ন করে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে পুণরায় জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদীস অর্জন করেন।
এ দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে তিনি কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ, ফারাইয প্রভৃতি বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন,- বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্যতম প্রধান আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.), হযরত মাওলানা দৌলত আলী (রহ.), হযরত মাওলানা লোকমান (রহ.), শায়েখে বালিয়া হযরত মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.), শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমদাদুল হক ও হযরত মাওলানা মুফতী মুসলিম উদ্দীন প্রমুখ। সুযোগ্য এ আলিমে দ্বীন ইল্মে যাহিরী শিক্ষা গ্রহণ করার পর ইল্মে বাতিনী চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এ পর্যায়ে তিনি তাজকিয়া নফ্স তথা আত্মশুদ্ধির জন্য মহান সাধক, প্রতিথযশা হাদীস বিশারদ আল্লামা নূরুদ্দীন আহমদ গওহরপুরী (রহ.)’র নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং তাঁর ওফাতের পর শায়েখে বালিয়া আল্লামা গিয়াস উদ্দীন (রহ.) পীর সাহেবের খিদমতে হাজির হয়ে বাতিনী কামালিয়ত হাসিল করার জন্য মনোনিবেশ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি শেরপুর অঞ্চলে আগমন করেন ১৯৭৫ ঈসায়ী সনে রমযান মাসে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী খরমপুর জামে মসজিদে খতমে তারাবীহ্ নামায পড়ানোর জন্য। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মুসুল্লীগণ তার সুললিত কন্ঠের তিলাওয়াত, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান গরিমা ও চরিত্র মাধুযর্তা এবং কর্ম দক্ষতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাকে শেরপুর শহরস্থ মুন্সিবাজার মৌজায় তেরাবাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন। পরে তারই পরামর্শে এবং শেরপুরের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক ইচ্ছানুযায়ী তেরাবাজার মসজিদের পাশে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু জায়গা না থাকার দরুণ প্রাথমিকভাবে এই মসজিদের বারান্দায় ১৯৭৮ ঈসায়ী সনে তিনি হিফ্য বিভাগের মাধ্যমে ছাত্রদের র্দস দান শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আশাতীতভাবে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদ্রাসার নিজস্ব ঘরের প্রয়োজন দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই একদিন প্রচন্ড ঝড়ে মসজিদ সংলগ্ন বাজারটি তছনছ করে ফেলে। এ অবস্থায় বড় হুজুর স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে তদানীন্তন আবাসিক প্রশাসক আবদুর রশিদ সাহেবের সহযোগিতায় বাজারটির আংশিক জায়গা (অর্পিত পরিত্যক্ত জমি) নিয়ে মাদ্রাসার জন্য একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণ করেন। শক্তিশালী কার্যনির্বাহী পরিষদ, এলাকাবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং এই আলিমে দ্বীনের সততা, কর্মদক্ষতা, কঠোর সাধনা এবং আল্লাহর অশেষ রহমতের ফলে পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসাটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদীস ক্লাস পর্যন্ত উন্নীত হয়। এই ছোট্ট মাদ্রাসাটিই বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া সিদ্দীকিয়া (তেরাবাজার মাদ্রাসা) নামে পরিচিত এবং যেটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করে গোটা শেরপুরবাসীর গৌরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন গত ৪০ বছর যাবৎ অত্র জামিয়ার মুহ্তামিম পদে অধিষ্ঠিত থেকে পাঠদান থেকে শুরু করে মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে অত্র অঞ্চলের অধিবাসীদের হিদায়াতের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন ধর্মসভায় ওয়াজ নসিহত, বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে হিদায়েতি বক্তব্য, বাতিল বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম ও লেখনীর মাধ্যমে আমৃত্যু ইসলামের খিদমত করে গত ২১ মে রোজ শনিবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে আল্লাহর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান (ইন্নালিল্লাহি……….রাজিউন)। মরহুমের শেরপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের জানাযা নামাযে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী পরিমাণ মুসুল্লীর ঢল দেখে সহজেই অনুমান করা যায় তিনি কতটা মানবহিতৈষী, দ্বীনের খেদমতদার ও আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন। আমরা তাঁর বিদেহী রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
বিস্তারিত: www.facebook.com/hafej.minhaz.1
লেবেলসমূহ:
ইসলামের ইতিহাস,
মুসলিমসেনাপতি,
যাকাত,
রোজা,
সাহাবাগণ,
হাদিসে রাসুল (সা:)
হজ্বের বিধান পালনে নারীর স্বতন্ত্রঃ
মোঃ মিনহাজ উদ্দীন

হজ্বে ক্ষেত্রে নারীর স্বতন্ত্র বিধানঃ
(১) হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তঃ হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া, বালেগ হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, হজ্বকালীন পারিবারিক খরচ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতীত হজ্বের সফরের যাবতীয় খরচ পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকা ইত্যাদি শর্তের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
* তবে হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য নারীর ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। আর তা হলো যদি নারীর বাড়ী থেকে মক্কার দূরত্ব ৪৮ মাইল বা তার বেশী হয়, তবে নারীর উপর হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য তার সাথে স্বামী বা কো একজন মুহাররাম পুরুষ থাকা জরুরী। হাদিস শরীফে এসেছে, “ রাসূল সা: বলেন, মুহাররাম পুরুষ ছাড়া কোন মহিলা সফর করবে না। আর মুহাররাম পুরুষ সাথে না থাকলে সে মহিলার কাছে কেউ প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল সা: আমি অমুক যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি, আর আমার স্ত্রী তো হজ্বে ইচ্ছা করেছে। রাসূল সা: তখন লোকটিকে বললেন, তুমিও তার সাথে হজ্বের জন্য বের হও”। ( বুখারী)
(২) ইহরাম বাঁধাঃ হজ্বের প্রথম ফরজ হলো ইহরাম বাধা। এটি নামাযের তাকবিরে তাহরিমার তুল্য। পুরুষের ইহরাম বাাঁধার সাধারণ নিয়ম হলো- প্রথমে পবিত্র হয়ে সেলাইবিহীন কাপড় পরতে হবে। তারপর দু’রাকাত নাময আদায় করে হজ্ব বা ওমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়তে হবে। ইহরামের জন্য পবিত্র হওয়া, নামায পড়া, নিয়ত করা ও তালবিয়া পড়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান।
* তবে নারী যদি ঋতুবতী হয়, তাহলে সে গোসল করবে; কিন্তু নামাজ পড়বে না। বরং শুধু নিয়ত করে তালবিয়া পড়ে নেবে।
*পুরুষের ইহরামের সাথে নারীর ইহরামের আরেকটি পার্থক্য হলো- পুরুষেরা সেলাই বিহীন কাপড় পড়বে, কিন্তু মহিলারা সেলাইযুক্ত কাপড় পড়ব। তথা তারা পর্দার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক যেমন- বোরকা নেকাব ইত্যাদি পড়বে। কারণ সেলাইবিহীন কাপড় দ্বারা তাদের পর্দা যথার্থভাবে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
লেবেলসমূহ:
ইসলামের ইতিহাস,
মুসলিমসেনাপতি,
যাকাত,
রোজা,
সাহাবাগণ,
হাদিসে রাসুল (সা:)
Poem
কবিতা:
মত্ত লুভি আজকে কেন? সব ভুলে তুই সল্পহীন।
কান পেতে শুন! টগবগে খুন করছে যেন আরতনাদ,
শংকা ভুলে ভাঙ্গগ সমুলে ঐ পাপিদের ব্যর্থ সাধ।
গেন পাপি ঐ নাস্তিকেরা বাড় বেড়েছে খুব এবার,
সব বাতিলের ভিত নাড়ীয়ে হানরে আঘাত দূর্নিবার।
কাপছে দেখ মুসলমানের আর্তনাদের তপ্ত ঢেঊ,
বলছে যেন নওযামানার বদলা নিতে জাগরে কেউ।
বাংলাদেশের সচ্ছ বায়ু হচ্ছে ভারি নিত্ত আজ,
জেল-জুলুম আর নিরবিচারে আজকে আমার চিত্ত লাজ।
আজকে কেন? বীর বাঙ্গালীর রক্তে এ দেশ হচ্ছে লাল,
মারল কেন শাপলা চকে আলেম সাধক নিরভেজাল।
মুসলমানের রাস্ট্রে কেন সত্য বলায় হচ্ছে জেল,
হকের আওয়াজ তুল্লে কেহ উঠছে বুকে শক্তি শেল।
ওঠছে ফেপে ছুটছে কেপে তপ্ত রুধির খিপ্ত ঢেউ,
বলব কি আর বলার নেই আর বললে স্রুতে পড়বে সেও।
ঐ চেয়ে দেখ বিশ্ব বিবেক কুন্দিকে আজ নিচ্ছে সায়,
বুদ্ধি পেচে শিয়াল গুলু আজকে তুদের পক্ষে নাই।
লেবেলসমূহ:
কালিমা,
তাফসীরুল কোরান,
দেওবন্দ ইতিহাস
সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬
রোজা
লেবেলসমূহ:
ইসলামের ইতিহাস,
মুসলিমসেনাপতি,
যাকাত,
রোজা,
সাহাবাগণ,
হাদিসে রাসুল (সা:)
হজ্জ ও ওমরাহ আদায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য :
cilck

– সাধারণভাবে কোন কিছুর প্রতি ইচ্ছা বা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। ইত্যাদি
পারিভাষিক অর্থ
– শরহে বেকায়া গ্রন্থকারের মতে- নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান যিয়ারত করার নামই হজ্জ।
– কামূসুল ফিকহী গ্রন্থপ্রণেতার মতে- মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কার্যাবলীর মাধ্যমে সম্মানিত বায়তুল্লাহ যিয়ারতের সংকল্প করার নামই হজ্জ।
– ইমাম রাগেব ইস্পাহানী রহ.-এর মতে- সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কাবা ঘরের ইচ্ছা পোষণ করাকে হজ্জ বলা হয়।
– ঐধুু সবধহং সধশরহম ঃযব ঢ়রষমৎরসধমব ঃড় সধপপধ.
মোটকথা আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিলহজ্জ মাসের ৮ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তারিখ পর্যন্ত পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ, সাফা মারাওয়া সাঈ, আরাফাহ, মিনা মোজদালিফায় অবস্থান, শয়তানকে পাথর মারাসহ নির্ধারিত কাজসমুহ সম্পাদন করাকে হজ্জ বলে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য প্রথম যে ঘর নির্মিত হয় তা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। কাবা ঘর পবিত্র এবং সারা জাহানের জন্য পথ প্রদর্শক। এতে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমুহ, যার একটি হচ্ছে মাকামে ইবরাহীম। কাবা ঘরে যে প্রবেশ করেছে সে নিরাপদ। [সুরা আল ইমরান -৯৭] মানবজাতির মধ্যে যাদের সামর্থ আছে তাদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা। কিন্তু সামর্থ থাকা সত্বেও যারা তা আদায় করে না, তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ তামাম জগতের প্রতিপালক, তিনি কারো কাছে মুখাপেক্ষী নন। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ করো। বুখারি শরীফে প্রিয় নবী সা. এরশাদ করেছেন, হজ্জ ফরয হওয়া সত্বেও তা আদায় না করে যে মৃত্যু বরণ করে, সে মুসলমান হয়ে মরল কিনা সে ব্যাপারে আমি সন্ধিহান। অপর এক হাদীসে আছে তার মৃত্যু ইহুদি নাসারাদের মৃত্যুর মতই হতে পারে।
রাসূল সা. আরো ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছা করবে, সে যেন তাড়াতাড়ি আদায় করে নেয়।
উল্লেখিত আয়াতে কারীমা এবং হাদীস শরীফে হজ্জ সম্পর্কে মহান আল্লাহর রাসূল যা বলেছেন, জ্ঞানীদের জন্য হজ্জের গুরুত্ব অনুধাবনে তা-ই যথেষ্ট নয় কি?
দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে অনেক সম্পদশালী মুসলমান আছেন তাদের উপর বহু পূর্বেই হজ্জ ফরজ হয়েছে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে যেমন ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদী, বাড়ি-ঘর সম্পন্ন করা, ব্যবসা-বাণিজ্য গুছিয়ে নেয়া ইত্যাদি দেখিয়ে হজ্জ আদায়ে গড়িমসি করে থাকেন। অনেক আবার বৃদ্ধ বয়সে হজ্জ করার আশায় থাকেন। অনেকেই বলেন হজ্জ ফরজ হয়েছে কিন্তু বয়সতো হয়নি। চুল দাড়ি পাক ধরুক তারপর হজ্জ করতে যাব। অনেকেই বলেন বাবা-মার আগে হজ্জ আদায় হয়না। দুর্ভাগ্য যে, তাদের অনেকেই এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আবার অনেকেই আর্থিক দৈন্যতা ও শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়। ফলে তারা হজ্জ আদায়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত ও নেয়ামত থেকে মাহরুম হয়ে যায়। তাই সামর্থবান মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান, সকল প্রকার চিন্তাভাবনা ও গড়িমসি পরিহার করে যাদের উপর হজ্জ ফরয হয়েছে তারা বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হজ্জ আদায় করুন। কারণ কার মৃত্যু কখন এসে যায় বলা যায়না। অনেকেই হয়ত ভাবেন আমি হজ্জে গেলে সংসার কিভাবে চলবে। এটা এক ধরনের গুমরাহী। আপনার অনুপস্থিতিতেও সংসার চলবে, কারণ রিযিকের মালিক আল্লাহ। এক সময় আপনার সংসার সমাজ সবি চলবে আপনিই থাকবেন না। যারা হজ্জ করতে যায় তারা আল্লাহ তাআলার খাস মেহমান আর আল্লাহর মেহমানের সংসার আল্লাহ তাআলা দেখাসোনার দায়িত্ব নিবেন। আর যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করবে তার সম্পদ কখনও কমবে না; বরং আরো বরকতময় হবে।
হজ্জ ও ওমরার ফযীলত
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। কারণ, হজ্জের মধ্যে যেমন সম্পদের প্রয়োজন তেমনি শক্তিরও প্রয়োজন। হজ্জ একটি আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। মাকবুল হজ্জ আদায়কারীর পুরস্কার জান্নাত।
* তিরমিযি শরীফের হাদীসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, তোমরা সামর্থ হওয়ার সাথে সাথে হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করে নাও। কেননা স্বর্ণকার ও কর্মকার যেমন স্বর্ণ ও রৌপ্য ও লৌহকে পুড়িয়ে-পিটিয়ে ময়লা ও ভেজাল থেকে মুক্ত করেন, ঠিক তেমনি হজ্জ ও ওমরাহ মানুষের দারিদ্রতা ও গুনাহসমুহকে বিদূরিত করে দেয়।
* সুরা হজ্বের ২৭ নং আয়াতে উল্লেখ আছে- লোকদের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা করে দিন, তারা পদব্রজে এবং সর্বপ্রকার দুর্বল উটনীতে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে (হজ্জের উদ্দেশ্যে) আপনার কাছে এসে হাজির হয়।
* আল্লাহর জন্য হজ্জ আদায়কারী সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ। [বুখারি ও মুসলিম শরীফ]
* হজ্জ ওমরাহ আদায়কারীর গুনাহ ও দারিদ্রতা এমনভাবে দুরিভুত হয়, লোহা ও স্বর্ণের ময়লা যেমনভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। হজ্জযাত্রীগণ আল্লাহর মেহমান, তাদের সকল দুআ ও প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। [ইবনে মাজাহ]
* হজ্জ আদায়কারী কখনো গরীব হয়না। [ত্বাবরানী]
* হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. এরশাদ করেছেন, “হে মানব সমাজ! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন; সুতরাং তোমরা হজ্জব্রত পালন কর।
পবিত্র কুরআন শরীফের আটটি সূরার মোট পায়ত্রিশখানা আয়াতে হজ্জ ও ওমরা সম্পর্কীয় বর্ণনা এসেছে।
যার উপর হজ্জ ফরজ এবং যার উপর ফরজ নয়
– মুসলমান হওয়া: কেননা অমুসলিমদের উপর হজ্জ ফরজ নয়।
– স্বাধীন হওয়া: দাস- দাসিদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কেননা তারা স্বীয় ইচ্ছার প্রতি সামর্থবান নয়।
– বালেগ হওয়া: কেননা নাবালেগ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর হজ্জ ফরয নয়।
– সুস্থ হওয়া: প্রতিবন্ধী, দুর্বল, যানবাহনে আরোহণে অক্ষম, মস্তিস্ক বিকৃতদের ব্যক্তির ওপর হজ্জ ফরয নয়।
– দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হওয়া: কেননা অন্ধ ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয নয়।
– পাথেয় থাকা: হজ্জকারীর সম্পদের পরিমাণ ততটুকু হতে হবে, যাতে আসা যাওয়ার সমস্ত খরচের পর বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবার, পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে পারে।
– মহিলার সাথে স্বামী বা মাহরাম থাকা: যদি হজকারীনী তার বাড়ি থেকে কাবা ঘরের দূরত্ব ৪৮ মাইল বা এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তার সাথে স্বামী বা মুহাররম (বিবাহবন্ধন হারাম এমন পুরুষ) থাকতে হবে।
– যানবাহনের সুবিধা থাকা: কেননা যানবাহনের সুবিধা না থাকলে হজ্জ ফরয নয়।
– জ্ঞানবান হওয়া: কেননা পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয়
– কয়েদি না হওয়া: কারাবন্দির ওপর হজ্জ ফরয নয়। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি প্রেরণ করাও জরুরী নয়।
– যদি কারও নিকট এতটুকু পাথেয় থাকে যার দ্বারা মক্কা শরীফের যাতায়াতের ব্যয় নির্বাহ হতে পারে, কিন্তু মদীনা শরীফ গমনের মত টাকা পয়সা না থাকে তবে তার উপরও হজ্জ ফরজ।
হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্তাবলী
১. মুসলমান হওয়া
২. শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া এবং আর্থিক সামর্থ থাকা।
৩. বুদ্ধিমান ও বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া।
হজ্জের প্রকার
হজ্জ তিন প্রকার যথাঃ
(১) তামাত্তো, (২) ক্বিরান, (৩) ইফরাদ।
১. হজ্জে তামাত্তো : আভিধানিক অর্থ-
– উপভোগ করা, উপস্থিত ফায়দা লাভ করা, উপকার লাভ করা।
পারিভাষিক অর্থ-
* শরহে বেকায়া গ্রন্থকারের মতে- তামাত্তো হলো, হজ্জ পালনেচ্ছুক ব্যক্তি হজ্জের মাসে প্রথমে মীকাত হতে ওমরা পালনের জন্য ইহরাম বাধবে, তারপর তাওয়াফ করবে, সাফা- মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সায়ী করবে, হলক অথবা কসর করবে।
৮ই জিলহজ্জ তারিখে মিনা যাওয়ার প্রাক্কালে হজ্জের নিয়তে পুনরায় ইহরাম বাঁধবে। এই জন্য এই নিয়মে ইহরাম দীর্ঘায়িত হয় না। হাজী সাহেবানদের জন্য এই নিয়ম সহজ ও অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক। তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ হাজী সাহেবগণ তামাত্তো হজ্জ করে থাকেন। তামাত্তো হজ্জকারীদের সংখ্যা সর্বাধিক হয়ে থাকে। মহিলাদের জন্য তামাত্তো হজ্জই বেশি সমীচীন। তামাত্তো হজ্জের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব। তামাত্তো হজ্জে প্রথমে ওমরার নিয়ত করতে হবে।
হজ্জের নিয়ত
ইয়া আল্লাহ! আমি তামাত্তু হজ্জের নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন ও কবুল করুন।
ওমরাহর নিয়ত
ইয়া আল্লাহ! আমি তামাত্তো হজ্জ আদায়ের নিমিত্তে প্রথমে ওমরাহ আদায়ের নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন ও কবুল করুন। এরপর ৮ জিলহজ্জ মক্কা মোকাররমা থেকে ইহরাম বেধে হজ্জের নিয়ত করতে হবে।
(২) হজ্জে ক্বিরান : আভিধানিক অর্থ-
– মিলানো, সংযুক্ত করা
– দুটি বস্তুকে একত্রিত করা, সাথী হওয়া।
পারিভাষিক অর্থ-
ওমরাহ ও হজ্জ এক সাথে আদায়ের জন্য ইহরাম বেঁধে প্রথমে ওমরাহ পালন করে ইহরাম না খুলে একই ইহরামে হজ্জ সমাপন করাকে “হজ্জে ক্বিরান ” বলে।
এ নিয়মে ওমরার তাওয়াফ এবং সায়ী করে হজ্জের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যারা হজ্জের কাছাকাছি সময়ে মক্কা শরীফে আসবে তাদের জন্য ক্বিরান হজ্জের নিয়ত করা উত্তম এবং সওয়াবও অধিক। ক্বিরান হজ্জকারীদের সংখ্যা কম হয়ে থাকে। ক্বিরান হজ্জের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব। ক্বিরান হজ্জের জন্য ওমরাহ ও হজ্জের নিয়ত এক সাথে করতে হবে।
(৩) হজ্জে ইফরাদ :
আভিধানিক অর্থ-
– একাকি, একক, বিজোড়
– ঝড়ষরঃধৎু, টহরঃ, ঁহরঃবফ, অষড়হ
পারিভাষিক অর্থ-
শুধুমাত্র ইহরাম বেঁধে হজ্জ সমাপন করাকে “হজ্জে ইফরাদ” বলে। এতে কোন ওমরাহ করতে হয় না। ইফরাদ হজ্জকারীদের সংখ্যা কম হয়ে থাকে। ইফরাদ হজ্জের জন্য কুরবানি ওয়াজিব নয়, তবে করা মুস্তাহাব। ইফরাদ হজ্জের জন্য শুধুমাত্র হজ্জের নিয়ত করতে হবে।
হজ্জের ফরজ তিনটি
১- ইহরাম বাঁধা ,
২- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩- তাওয়াফে যিয়ারত করা।
(১) ইহরাম বাঁধা: গুনাহ বর্জন, নেক আমলের প্রতিশ্র“তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জব্রত পালনের নিয়ত এবং তালবিয়া পাঠের নামই ইহরাম।
(২) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা: ৯ই জিলহজ্জ দ্বিপ্রহর থেকে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোন সময় এক মূহুর্তের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
(৩) তাওয়াফে যিয়ারত: ১০ জিলহজ্জের ভোর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা।
হজ্জের ওয়াজিব সমুহ
হজ্জের ওয়াজিব ৬টি যথা-
১- ৯ই জিলহজ্জ দিবাগত রাত্রে আরাফার ময়দান হতে মিনায় ফিরার পথে মুজদালিফায় রাত্রি যাপন এবং সেখানে মাগরিব ও এশার নামায একই সাথে আদায় করা।
২- সাফা-মারওয়া পাহাড় সাঈ করা।
৩- ১০, ১১, ১২ইং জিলহজ্জ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা।
৪- ক্বেরান ও তামাত্তো হাজীদের জন্য কুরবানি করা।
৫- কুরবানির পরে মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা।
৬- মিকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা।
হজ্জের সুন্নত সমুহ
১- মীকাতের বাইরে থেকে আগমনকারীদের জন্য তাওয়াফে কুদুম করা,
২- তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ (কাল পাথর) থেকে শুরু করা।
৩- যে তাওয়াফের সাঈ আছে সেই তাওয়াফে রমল এবং ইযতিবা করা।
৪- সাফা-মারাওয়ার মধ্যে যে দুটো সবুজ বাতি আছে তার মধ্যবর্তী স্থান দৌড়ে অতিক্রম করা। তবে মহিলাদের জন্য প্রযোয্য নয়
৫- মক্কায় ৭ই জিলহজ্জ তারিখে আরাফাতে ৯ই জিলহজ্জ তারিখে এবং মিনায় ১২ই জিলহজ্জ তারিখে ইমামের খুতবাহ শোনা।
৬- ৮ই জিলহজ্জ তারিখে দিবাগত রাত মিনায় কাটানো।
৭- সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পূর্বে মুজদালিফা থেকে মিনায় রওয়ানা হওয়া।
৮- ১০ই জিলহজ্জ এবং ১১ই জিলহজ্জ তারিখের রাত এবং ১২ই জিলহজ্জ তারিখেও মিনায় থাকলে ১৩ই জিলহজ্জ তারিখ দিবাগত রাতও সেখানে কাটানো।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
(১) খোশবু ব্যবহার করা (২) সেলাই করা কাপড় পরিধান করা (স্ত্রী লোক সেলাই করা কাপড় পড়তে পারবে) (৩) চুল পশম বা নখ কাটা বা উপড়ে ফেলা। (৪) চুল দাড়িতে খেজাব লাগানো। (৫) বৃক্ষ, ঘাস, গাছপালা কাটা বা ছেঁড়া। (৬) সুগন্ধি টুথপেষ্ট ব্যবহার করা। (৭) মাথা ও মুখ ঢাকা (৮) পশু-পাখি শিকার করা বা সাহায্য করা। (৯) কীটপতঙ্গ, মশা, মাছি, উকুন বা যে কোন প্রাণী হত্যা করা। (১০) সর্বপ্রকার যৌনচারে জড়িয়ে পড়া। (১১) ঝগড়া বিবাদ করা (১২) কোন গুনাহর কাজ করা। (১৩) মোজা পরিধান করা। (১৪) পুরুষের মুখমন্ডল ও মাথা ঢেকে রাখা। (১৫) জাফরান মিশ্রিত কোন কাপড় পরিধান করা। (১৬) পাগড়ী পরিধান করা।
পুরুষদের জন্য ইহরাম অবস্থায় এমন জুতা ব্যবহার করা, যার দ্বারা পায়ের পাতার মাজখানের গিরাটি ঢেকে যায়। তা পূর্ণ ১ দিন বা রাত্রি পরিধান করলে কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। যারা প্রথমে মদীনা শরীফে যাবেন তাদের মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফে আসার পথে ইহরাম বাধলেই চলবে, কিন্তু মক্কায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাধার পর মদীনায় যাওয়ার ইচ্ছা হলে ইহরাম খুলা যাবেনা। যদি খুলে তবে দম ওয়াজিব হবে।
হজ্জের তালবিয়া
উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্ নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারীকা লাক।
অর্থ : আমি হাযির হে আল্লাহ! আমি হাযির, আমি হাযির। আপনার কোন শরীক নেয়, আমি হাযির। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত আপনারই, আর সকল সাম্রাজ্য আপনারই, আপনার কোন শরীক নেই।
দুআ কবুলের স্থানসমুহ
(১) মাতাফ তথা তাওয়াফের জায়গায়, (২) মুলতাজাম বা কাবা ঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান, (৩) মীযাবে রহমত বা কাবা শরীফের ছাদের পানি যে স্থান দিয়া নিচে পরে সে স্থান (হাতিমের মধ্যে), (৪) যমযম কুয়ার কাছে, (৫) মাকামে ইবরাহীম অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম আ. এর পদচিহৃ যেখানে সংরক্ষিত আছে তার পিছনে, (৬) সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপর, (৭) রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে, (৮) মিনার ময়দানে (৯) আরাফাতের ময়দানে, (১০) জাবালে রহমতে, (১১) মুজদালিফার ময়দানে, (১২) জাবালে নূর যেখানে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল, (১৩) জাবালে সওর যেখানে প্রিয় নবী সা. হযরত আবু বকর রা.কে নিয়ে অবস্থান করেছিলেন, (১৪) জাবালে ওহুদ যেখানে ওহুদের যুদ্ধ হয়েছিল এবং প্রিয় নবীজি সা. এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছিল, (১৫) দারে আরকাম যেখানে হযরত ওমর রা. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, (১৬) জান্নাতুল বাকী ও জান্নাতুল মোয়াল্লা যে কবরস্থানদ্বয়ে প্রিয় নবীজির সাহাবায়ে কেরাম, আওলাদে পাক, আযওয়াজে মুতাহ্হারা , শুহাদায়ে কেরাম শুয়ে আছেন ও অন্যান্য পবিত্র স্থান সমুহ। সবিশেষে দুআ করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে হজ্জে মাবরুর দান করেন। আমীন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, তরুণ আলেম,
www.facebook.com/hafej.minhaz.1
রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬
ভুল মাসআলা
হাঁটুর কাপড় সরে গেলে ওযু ভেঙ্গে যাবেঃ
এই ভুল মাসআলাও কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে।
এটা ঠিক যে, হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত এবং তা ঢেকে রাখা জরুরি। এদিকেও খেয়াল রাখা উচিত যে, পা ধোয়ার সময় বা অন্য কোন সময় যেন হাঁটু থেকে কাপড় সরে না যায়, কিন্তু কোন সময় কাপড় সরে গেলে ওযু ভেঙ্গে যাবে এ কথা ঠিক নয়। কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব যেমন- বেহেশতি যেওর ইত্যাদি থেকে ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ভালোভাবে মুখস্থ করে নেওয়া উচিত।
বিস্তারিত
এই ভুল মাসআলাও কোথাও কোথাও প্রচলিত আছে।
এটা ঠিক যে, হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত এবং তা ঢেকে রাখা জরুরি। এদিকেও খেয়াল রাখা উচিত যে, পা ধোয়ার সময় বা অন্য কোন সময় যেন হাঁটু থেকে কাপড় সরে না যায়, কিন্তু কোন সময় কাপড় সরে গেলে ওযু ভেঙ্গে যাবে এ কথা ঠিক নয়। কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব যেমন- বেহেশতি যেওর ইত্যাদি থেকে ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ভালোভাবে মুখস্থ করে নেওয়া উচিত।
বিস্তারিত
শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬
মাদরাসার জন্য কালেকশনকারীকে কালেকশনকৃত অর্থ থেকে বেতন দেয়া যাবে কি?
www.facebook.com/hafej.minhaz.1
প্রশ্ন হলো মাদ্রাসার কালেকশান করে সেই টাকা দিয়ে বেতন নেওয়া জায়েজ আছে কিনা? বা কোন মোহতামিমের জন্য কি সেই টাকা দিয়ে বেতন দেয়া বৈধ হবে?
যদি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কাউকে কালেক্টর নিয়োগ করে। যার কাজ হল মাদরাসার
জন্য টাকা কালেকশন করে দেয়া। তাহলে উক্ত কালেক্টরের জন্য বেতন নেয়া
সম্পূর্ণ জায়েজ।
কালেকশনকৃত সম্পদ দুই ধরণের। যথা-
১-যাকাত ও ওয়াজিব সদকা।
২-নফল অনুদান।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কালেক্টর যদি যাকাত কালেকশন করে নিয়ে আসে, তাহলে উক্ত যাকাতের টাকা থেকে তাকে বেতন দেয়া জায়েজ হবে না। কারণ যাকাতের টাকা কেবলি গরীবের হক। যাকাতের টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা বৈধ নয়। কিন্তু তাকে জেনারেল ফান্ড থেকে বেতন দেয়া যাবে যাকাত কালেকশন করার কারণে।
আর যদি কালেক্টর নফল অনুদান কালেক্ট করে, তাহলে উক্ত অনুদান থেকে কর্তৃপক্ষ তাকে বেতন প্রদান করতে পারে।
প্রশ্ন হলো মাদ্রাসার কালেকশান করে সেই টাকা দিয়ে বেতন নেওয়া জায়েজ আছে কিনা? বা কোন মোহতামিমের জন্য কি সেই টাকা দিয়ে বেতন দেয়া বৈধ হবে?
কালেকশনকৃত সম্পদ দুই ধরণের। যথা-
১-যাকাত ও ওয়াজিব সদকা।
২-নফল অনুদান।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কালেক্টর যদি যাকাত কালেকশন করে নিয়ে আসে, তাহলে উক্ত যাকাতের টাকা থেকে তাকে বেতন দেয়া জায়েজ হবে না। কারণ যাকাতের টাকা কেবলি গরীবের হক। যাকাতের টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা বৈধ নয়। কিন্তু তাকে জেনারেল ফান্ড থেকে বেতন দেয়া যাবে যাকাত কালেকশন করার কারণে।
আর যদি কালেক্টর নফল অনুদান কালেক্ট করে, তাহলে উক্ত অনুদান থেকে কর্তৃপক্ষ তাকে বেতন প্রদান করতে পারে।
فى رد المحتار- ويشترط أن يكون الصرف ( تمليكا ) لا إباحة كما مر -كتاب الزكاة -باب المصرف أي مصرف الزكاة والعشر-3/291
মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১৬
একটি ভুল ধারণা : অবিবাহিত ইমামের পেছনে কি নামায পড়া যাবে না
আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকার মানুষের ধারণা, অবিবাহিত ইমামের পেছনে নামায পড়া যাবে না। আবার কারো কারো ধারণা, অবিবাহিত ইমামের পেছনে জুমার নামায পড়া যাবে না। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। ইমামতের জন্য বিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। অবিবাহিত ব্যক্তির পেছনে জুমাসহ সকল নামাযই পড়া যাবে। সুতরাং এ ভিত্তিহীন ধারণা পরিহার করা আবশ্যক।
বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬
রিজিক হালাল না হলে কি দুআ কবুল হয় না?
উপার্জন/রিজিক হালাল না হলে নামাজ রোজা দোয়া ইত্যাদি সহ সমস্ত ইবাদত কবুল
হওয়া বা না হওয়ার হুকুম কি, আবার উপার্জন/রিজিক কতটুকু হারাম হলে হুকুম কি হবে তাও জানাবেন দয়া করে।
হওয়া বা না হওয়ার হুকুম কি, আবার উপার্জন/রিজিক কতটুকু হারাম হলে হুকুম কি হবে তাও জানাবেন দয়া করে।
ইবাদতে ও দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে হালাল খাদ্যের অনেক প্রভাব রয়েছে। খাদ্য হালাল না হলে ইবাদত ও দুআ কবুল হওয়ার যোগ্য হয় না। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
« أيها الناس إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين فقال ( يا أيها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا إنى بما تعملون عليم) وقال (يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم) ». ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يديه إلى السماء يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذى بالحرام فأنى يستجاب لذلك ».
তরজামা: হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা হলেন পবিত্র। আর তিনি পবিত্রতা ছাড়া কবুলই করেন না। আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রাসূলগণকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন “হে রাসূলগণ পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত”। (সূরা মুমিনুন-৫২) তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি। (সূরা বাকারহ -১৭২) এরপর এক লোকের কথা বললেন যে দীর্ঘ সফর করে আসে। এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু‘ হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ারদেগার! ইয়া রব! । কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক- পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দেয়া কি করে কবুল হতে পারে?। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ২৩৯৩)
সূরা মুমিনুন-(৫২) এর উক্ত আয়াত বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য। আল্লাহ তাআলা পয়গম্বরগণকে নিস্পাপ রেখেছিলেন। তঁদেরকেই যখন হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করার এবং সৎকর্ম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তখন উম্মতের জন্য এই আদেশ আরো পালনীয়।
হাদীসটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায় যে, কিছু কিছু শুভ মুহূর্ত রয়েছে যে সময়কার দুআ আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। দীর্ঘ সফর করে আসা ক্লান্ত শ্রান্ত আলোচ্য ব্যক্তির মধ্যে দুআ কবুল হওয়ার অনেক সবব ও উপকরণ বিদ্যমান থাকলেও যেহেতু তার পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দুআ কবুল হওয়া সুদূর পরাহত।
হাদীসটির একটি ব্যাখ্যা
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. তাঁর বিখ্যাত ‘জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ গ্রন্থে বলেন-
* وفي هذا الحديث إشارةٌ إلى أنَّه لا يقبل العملُ ولا يزكو إلاَّ بأكل الحلال ، وإنَّ أكل الحرام يفسد العمل ، ويمنع قبولَه ، فإنَّه قال بعد تقريره : (( إنَّ الله لا يقبلُ إلاَّ طيباً )) إنَّ الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين ، فقال : { يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً } ، وقال : { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ } .
অর্থাৎ এ হাদীসে এ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হালাল ভক্ষণ ব্যতীত আমল গৃহীত হয়না এবং তা পরিশুদ্ধি লাভ করে না। হারাম ভক্ষণ আমলকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে বাধা প্রদান করে। …
কোন আমল কবুল হওয়া না হওয়া সংক্রান্ত একটি মৌল কথা:
এ প্রসঙ্গে যাহেদ আবু আব্দুল্লাহ আননাজী রহ. খুব চমৎকার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন-
وقال أبو عبد الله الناجي الزاهد رحمه الله : خمسُ خصال بها تمامُ العمل : الإيمان بمعرفة الله – عز وجل – ، ومعرفةُ الحقِّ ، وإخلاصُ العمل للهِ ، والعمل على السُّنَّةِ ، وأكلُ الحلالِ، فإن فُقدَتْ واحدةٌ، لم يرتفع العملُ ، وذلك أنَّك إذا عرَفت الله – عز وجل – ، ولم تَعرف الحقَّ ، لم تنتفع ، وإذا عرفتَ الحقَّ ، ولم تَعْرِفِ الله ، لم تنتفع ، وإنْ عرفتَ الله ، وعرفت الحقَّ ، ولم تُخْلِصِ العمل ، لم تنتفع ، وإنْ عرفت الله ، وعرفت الحقَّ ، وأخلصت العمل ، ولم يكن على السُّنة ، لم تنتفع ، وإنْ تمَّتِ الأربع ، ولم يكن الأكلُ من حلال لم تنتفع .
পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এমন যদ্বারা আমল পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। ১. আল্লাহ্ পাকের মারেফাতে বিশ্বাস স্থাপন করা। ২. হক ও হক্কানিয়াত জানা ও বুঝা। ৩. আমল সযতœ নিষ্ঠায় একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য করা।৪.আমল (মনগড়া পদ্ধতিতে না করে) সুন্নাত মোতাবেক করা। ৫. আহার্য হালাল হওয়া। যদি এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যর বত্যয় ঘটে তথা কোন একটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে আমল উর্ধ্ব লোকে বিচরণ করবে না। (তথা আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত হবে না)। কারণ-
কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল অথচ হক ও হক্কানিয়াত চিনল না তা উপকারে আসবে না। আবার কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল কিন্তু ইখলাস ও নিষ্ঠায় সে রিক্ত ও শূণ্য তাহলে তা তার উপকারে আসবে না। কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল আবার ইখলাস- নিষ্ঠায়ও তার কমতি নেয় কিন্তু তার আমলের পদ্ধতিটি সুন্নাহ সম্মত নয় তাহলে এ আমল তার উপকারে আসবে না। যদি উক্ত চারও বৈশিষ্ট্য পূর্ণ মাত্রায় পাওয়া যায় অথচ আহার্য হালাল না হয় তাহলেও এ আমল উপকারে আসবে না।
(ইবনে রজব হাম্বলী -জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, হাদীস নং ১০.)
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণযোগ্য: নামাজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদত থেকে বান্দার উপর অর্পিত ফরজ দ্বায়িত্ব থেকে নিস্কৃতি লাভ করা এক জিনিস। আর হারাম ভক্ষণের ফলে ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়া না হওয়া আরেক বিষয়। আপনার প্রশ্নটি দ্বিতীয় অংশের সাথে সম্পর্কিত। প্রথমাংশ তথা এরূপ ব্যক্তি তার উপর অর্পিত ফরজ দ্বায়িত্ব থেকে নিস্কৃতি লাভ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য যে, হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ্ তাআলার কাছে বেশি বেশি দোআ করতে কবে এবং এর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে। কোন আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গের সাহচার্য গ্রহণ এক্ষেত্রে বড় সহায়ক হবে বলে মনে করি। তাই বলে নামায, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত বাদ দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে। হারামতো হারামই স্বল্প হোক আর বেশি হোক।
খাদ্য হালাল না হলে তার ক্ষতি:
খাদ্য হালাল না হলে তার ক্ষতি অনেক বিস্তীর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। তন্মধ্যে গুটি কয়েক উল্লেখ করা হলো মাত্র-
১.
খাদ্য হারাম হলে সৎকর্মের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও তাতে নানা বিপত্তি প্রতিন্ধক হয়ে যায়। পক্ষান্তরে খাদ্য হালাল হলে সৎকাজের তাওফীক আপনা-আপনি হতে থাকে।
২.
খারাপ আহার্য কলবকে বিনষ্ট করে দেয় ফলে অন্তর থেকে ইখলাস, কোমলতা ইত্যাদি সৎ গুণাবলী বিদায় গ্রহণ করে।
মোটকথা উপরের আলোচনা থেকে আমারা বুঝতে পারলাম যে, নেক আমলের ব্যাপারে হালাল খাদ্যের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অনুরূপ হালাল খাদ্য গ্রহণে দোয়া কবুল হওয়ার আশা এবং হারাম খাদ্যের প্রতিক্রিয়ায় তা কবুল না হওয়ার আশঙ্কায়ই থাকে বেশী।
وفى جامع العلوم والحكم لابن رجب الحنبلى …لكن القبول قد يُراد به الرضا بالعمل ، ومدحُ فاعله ، والثناءُ عليه بين الملائكة والمباهاةُ به ، وقد يُراد به حصولُ الثواب والأجر عليه ، وقد يراد به سقوط الفرض به من الذمة ، فإنْ كان المراد هاهنا القبولَ بالمعنى الأوَّل أو الثاني لم يمنع ذلك من سقوط الفرض به من الذمة((1)) ، كما ورد أنَّه لا تقبل صلاة الآبق ، ولا المرأة التي زوجها عليها ساخطٌ ، ولا من أتى كاهناً ، ولا من شرب الخمر أربعين يوماً ، والمراد – والله أعلم – نفي القبول بالمعنى الأوَّل أو الثاني ، وهو المراد – والله أعلم – من قوله – عز وجل – : { إنَّما يَتقبَّلُ الله من المتَّقي (2)) . ولهذا كانت هذه الآية يشتدُّ منها خوفُ السَّلف على نفوسهم ، فخافوا أنْ لا يكونوا من المتَّقين الذين يُتقبل منهم .( الحديث العاشر)
…ولأن أكل الحرام يفسد القلوب ، فتحرم الرقة والاخلاص ، فلا تقبل الأعمال . وإشارة الحديث إلى أنه لم يقبل ؛ لأنه ليس بطيب .- المُفْهِمْ ،لِمَا أَشْكَلَ مِنْ تلخيصِ كتابِ مُسْلِمْ –
বাপের বাড়ি গেলেই তিন তালাক” বলার পর উক্ত কসম থেকে বাঁচার কোন হিলা আছে কী?
এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে বলল “যদি তুমি বাপের বাড়ি যাও তাহলে তুমি তিন তালাক”।
ঝগড়া থেকে যাবার পর স্বামী স্ত্রীর মাঝে মিল হয়ে যায়। কিছুদিন হল, স্ত্রীর মা অসুস্থ্য। মাকে দেখার জন্য স্ত্রী বাপের বাড়ি যেতে চাচ্ছে, গেলেই কি তালাক হয়ে যাবে?
এ কসম থেকে বাঁচার পদ্ধতি কী?
স্ত্রীর সাথে সামান্য ঝগড়া হলেই তালাকের কথা বলা বাচ্চাসূলভ আচরণ। সেই সাথে আহমকীও বটে।এরকম বাচ্চাসূলভ আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
শর্তের উপর তালাক সম্পৃক্ত করলে উক্ত শর্ত পাবার সাথে সাথে তালাক পতিত হয়ে যায়।
তাই উক্ত স্ত্রী পিতার বাড়ি যাবার সাথে সাথেই তিন তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যাবেন।তিন তালাক হলে গেলে উক্ত স্ত্রীকে আর ঘরে তুলতে পারবে না স্বামী। তাই এক্ষেত্রে কোনভাবেই উক্ত স্ত্রীর বাপের বাড়ি যাওয়া যাবে না।
فى الهداية: وإذا أضافه إلى شرط وقع عقيب الشرط مثل أن يقول لامرأته إن دخلت الدار فأنت طالق ” وهذا بالاتفاق لأن الملك قائم في الحال والظاهر بقاؤه إلى وقت وجود الشرط فيصح يمينا أو إيقاعا ” (الهداية، كتاب الطلاق، باب الأيمان فى الطلاق-2/385، الفتاوى الهندية-1/420)
একটি হিলা!
স্বামীর উক্ত কসম থেকে বাঁচার একটি হিলা কৌশল এই হতে পারে যে, স্বামী তার স্ত্রীকে এক তালাকে রেজয়ী প্রদান করবে। তারপর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত [তিন হায়েজ আর গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া] পালন করবে। তারপর উক্ত স্ত্রী তার বাপের বাড়ি চলে যাবে।
এরপর স্বামী উক্ত স্ত্রীকে আবার নতুন মোহর ধার্য করে দ্বিতীয়বার বিবাহ করবে।দ্বিতীয় বিয়ের পর স্ত্রী বাপের বাড়ি গেলে আগের বিয়ের সময়ের বাপের বাড়ি গেলে তিন তালাকের কসম আর প্রযোজ্য হবে না।
এ পদ্ধতিতে তালাকের এ কসম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া কোন গত্যান্তর নেই।
(وَتَنْحَلُّ) الْيَمِينُ (بَعْدَ) وُجُودِ (الشَّرْطِ مُطْلَقًا) لَكِنْ إنْ وُجِدَ فِي الْمِلْكِ طَلُقَتْ وَعَتَقَ وَإِلَّا لَا، فَحِيلَةُ مَنْ عَلَّقَ الثَّلَاثَ بِدُخُولِ الدَّارِ أَنْ يُطَلِّقَهَا وَاحِدَةً ثُمَّ بَعْدَ الْعِدَّةِ تَدْخُلُهَا فَتَنْحَلُّ الْيَمِينُ فَيَنْكِحُهَا (الدر المختار، كتاب الطلاق، باب التعليق-
স্বামী মারা গেলে মহিলাদের জন্য চুড়ি ব্যবহার ও সাজগুজ করার হুকুম কী?
প্রশ্ন::যদি কোনো মহিলার স্বামী মারা যায় সেই মহিলার কি নাকের পাথর (স্বর্ণের অলংকার) হাতের বালা পড়তে পারবে?
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দত শেষ হবার আগ পর্যন্ত কোন প্রকার সাজগুজ বা অলংকার পরিধান করা জায়েজ নয়।তাই চুড়ি, চেইন ইত্যাদি কোন কিছুই পড়া যাবে না।
ইদ্দত শেষ হবার পর জায়েজ সব ধরণের অংলংকার পরিধান করা ও সাজগুজ করা জায়েজ আছে।
স্বামী মৃত্যুবরণকারী মহিলার ইদ্দতের সময়সীমা হল ৪মাস ১০দিন।
এ চার মাস দশদিন পর্যন্ত সাজগুজ এবং অলংকার পরিধান নিষেধ। এ সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে আর এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে না। তখন পরিধান করতে পারবে। {তাবয়ীনুল হাকায়েক-৩/২৬৬}
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ [٢:٢٣٤]
আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে। (সূরা বাকারা-২৩৪}
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُحِدُّ الْمَرْأَةُ فَوْقَ ثَلَاثٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا، وَلَا تَلْبَسُ ثَوْبًامَصْبُوغًا، إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ، وَلَا تَكْتَحِلُ، وَلَا تَمَسُّ طِيبًا إِلَّا أَدْنَى طُهْرَتِهَا إِذَا طَهُرَتْ مِنْ مَحِيضِهَا بِنُبْذَةٍ مِنْ قُسْطٍ، أَوْ أَظْفَارٍ
উম্মে আতিয়্যা রাঃ হতে বর্ণিত।রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রীলোক স্বামী ব্যতিত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ করবে না। অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশদিন শোক পালন করবে। আর এ সময় কোন রঙ্গিন কাপড় পরিধান করবে না। সাদা কাপড় ছাড়া। আর সুরমা ব্যবহার করবে না, এবং কোনরূপ সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করবে না। অবশ্য হায়েজ হতে পবিত্র হওয়ার পর সামান্য সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করতে পারে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৩০২}
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا لَا تَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ مِنَ الثِّيَابِ، وَلَا الْمُمَشَّقَةَ، وَلَا الْحُلِيَّ، وَلَا تَخْتَضِبُ، وَلَا تَكْتَحِلُ
রাসুল সাঃ এর স্ত্রী হযরত উম্মে সালামা রাঃ হতে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে স্ত্রীলোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙ্গিন এবং কারুকার্যমন্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিজাব ও সুরমা ব্যবহার না করে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৩০৪}
ফরজ গোসলের জন্য অযু করা কি জরুরী? গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় কোন কিছু ধরলে কি তা নাপাক হয়ে যায়?
জানতে হলে পড়তে হবে। লজ্জাপেলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যাবে।
কারো যদি গোসল ফরজ হয় (স্বপ্ন দোষ) তখন সে যা কিছু স্পর্শ করে সেই সব কিছু কি নাপাক হয়ে যায়?
আর ফরজ গোসল করার আগে কি অযু করতেই হবে? শুধু ফরজ ৩ টা আদায় করলেইতো গোসল হয়ে যাবে?
গোসল ফরজ অবস্থায় কোন কিছু স্পর্শ করলে উক্ত বস্তু নাপাক হবে না। হ্যাঁ, যদি হাতে নাপাক লেগে থাকে, আর উক্ত নাপাকীসহ কোথাও ধরা হয়, আর উক্ত স্থানে নাপাক লেগে যায়, তাহলেই কেবল উক্ত স্থানটি হবে।
ফরজ গোসলের আগে অযু করা সুন্নাহ। ফরজ নয়। তাই অযু না করলেও গোসল হয়ে যাবে। তবে শর্ত হল নাকে ও গলার ভিতরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। নাক ও গলার ভিতরসহ সারা শরীরের কোন এক স্থানেও যদি পানি না পৌঁছে, তাহলে ফরজ গোসল আদায় হবে না।
তাই সতর্কতা স্বরূপ আগে গোসল করে নেয়া উত্তম। তবে জরুরী নয়।
يتوضأ وضوئه للصلاة ثم يفيض على رأسه وسائر جسده ثلاثا (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الفصل الثانى فى سنن الغسل-1/14، البحر الرائق-1/49-50/ النهر الفائق-1/62)
ولا يكره طبخها ولا استعمال ما مسته من عجين أو ماء أو نحوهما الا اذا توضأت بقصد القربة، (رد المحتار-1/486، طحطاوى على مراقى الفلاح-116)
قَالَتْ مَيْمُونَةُ: «وَضَعْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُسْلًا، فَسَتَرْتُهُ بِثَوْبٍ، وَصَبَّ عَلَى يَدَيْهِ، فَغَسَلَهُمَا، ثُمَّ صَبَّ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ، فَغَسَلَ فَرْجَهُ، فَضَرَبَ بِيَدِهِ الأَرْضَ، فَمَسَحَهَا، ثُمَّ غَسَلَهَا، فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ، ثُمَّ صَبَّ عَلَى رَأْسِهِ وَأَفَاضَ عَلَى جَسَدِهِ، ثُمَّ تَنَحَّى، فَغَسَلَ قَدَمَيْهِ، فَنَاوَلْتُهُ ثَوْبًا فَلَمْ يَأْخُذْهُ، فَانْطَلَقَ وَهُوَ يَنْفُضُ يَدَيْهِ (صحيح البخارى، رقم الحديث-276،
মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রীণে থাকার কুরআন স্পর্শ ও এ্যাপস নিয়ে টয়লেটে গমণের বিধান!
১-প্রশ্নঃ মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর স্ক্রিনে কোরআন দেখে পড়ার ফজিলত, কাগজের কোরআন দেখে পড়ার ফজিলতের সমান হবে কি?
>২-প্রশ্নঃ মোবাইলে কোরাআন করিম স্পর্শ করার হুকুম কি? এবং কোরআন সফটওয়ার ইন্সটলকৃত মোবাইল নিয়ে টয়লেটে ঢুকা যাবে কি?
উত্তর
কুরআন যেহেতু গায়রে মাখলুক। তাই আমাদের সামনে পরিদৃষ্ট কুরআন হল মূল কুরআনের প্রতিচ্ছবি মাত্র। এ প্রতিচ্ছবি যেখানেই পরিদৃষ্ট হোক না, তা দেখে পড়া মানে কুরআন দেখে পড়ার হুকুমে হবে। চাই কুরআনের লিখিত রূপটি পাথরে খোদাই করা থাকুক, বা মোবাইল কম্পিউটারের স্ক্রীনে থাকুক, বা কোন কাগজ বা পাতায় লিখিত আকারে থাকুক। সব কিছুর বিধানই এক।
অর্থাৎ দেখে পড়লে কুরআন দেখে পড়ার সওয়াব হবে। তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে না। এসব নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে না। তবে মোবাইলে থাকা কুরআন এ্যাপস যদি বন্ধ করা থাকে, তথা মোবাইল স্ক্রীনে পরিদৃষ্ট না থাকে, তাহলে উক্ত মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশে কোন সমস্যা নেই।
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في شرح العمدة (ص384): “الوجه في هذا، والله أعلم أن الذي في اللوح المحـفوظ هو القرآن الذي في المصحف كما أن الذي في هذا المصحف هو الذي في هذا المصحف بعينه سواء كان المحل ورقاً أو أديماً أو حجراً أو لحافاً، فإذا كان مِنْ حكم الكتاب الذي في السماء أن لا يمسه إلا المطهرون وجب أن يكون الكتاب الذي في الأرض كذلك؛ لأن حرمته كحرمته، أو يكون الكتاب اسم جنس يعم كل ما فيه القرآن سواء كان في السـماء أو الأرض، وقد أوحـــى إلى ذلك قوله تعالى: {رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً} [البينة:2]، وكذلك قوله تعالى: {فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ} [عبس:13-14]. فوصفها أنها مطهرة فلا يصلح للمحدث مسها
আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই যা লৌহে মাহফুজে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে, চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক। সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, জমিনে থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে আবশ্যক করে। কেননা, এ [জমিনে থাকা কুরআন] কুরআনের সম্মান সে [আসমানে থাকা কুরআন] কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক। {শরহুল উমদাহ-৩৮৪}
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ [٥٦:٧٩
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍأَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬}
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:”لا يمس القرآن إلا طاهر“.
رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২}
আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী বলেনঃ ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা গ্রহণযোগ্য।
“إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة”،
ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ দের। এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়। {শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০}
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। {মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬}
হযরত ওমর রাঃ যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন যে, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না। {মুসনাদুল বাজ্জার-১/৪০১, মুস্তাদরাকে হাকেম-৪/৬৬, সুনানে দারা কুতনী-১/১২১, তাবাকাতুল কুবরা লিইবনে সাদ-৩/২৬৭, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-১/৮৭}
বুধবার, ১ জুন, ২০১৬
সহজ আমল অনেক সওয়াব
পূর্ণাঙ্গ অযু
‘অযু’ পবিত্রতা অর্জনের উপায়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মাসনুন
তরীকায় অযু করা হলে তা একটি নেক আমলও বটে। এটি অতি সহজ আমল, যা আমরা সকলেই
করি এবং দিনে একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অযুর প্রয়োজন হয়। আমরা
যদি একটু খেয়াল করে মাসনূন তরীকায় এই সহজ ও প্রয়োজনীয় আমলটি সম্পাদন
করি তাহলে অতি সহজে আমরা পেতে পারি অনেক বড় বড় পুরষ্কার।
হাদীস
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে কোনো ব্যক্তি অযু করে এবং
পূর্ণাঙ্গভাবে অযু করে অতঃপর বলে-
(আরবী)
তবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা,
সে প্রবেশ করতে পারবে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৫
ব্যাখ্যা
এটি একটি সুসংবাদবাহী সুন্দর হাদীস। এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অযুর ফরয, সুন্নাত ও আদাবের প্রতি লক্ষ রেখে উত্তমরূপে অযু
করার এবং অযুর শেষে দুআ পড়ার একটি সহজ আমলের কথা বলেছেন। যা দেহকে সজীব ও
পবিত্র করে, মনে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে। এই সহজ আমলের জন্যও
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন বলে সু-সংবাদ দেওয়া
হয়েছে। তার জন্য জান্নাতের কটি দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং সে নিজের
ইচ্ছামতো যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
অন্যান্য হাদীসে অযুর আরো ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ওসমান ইবনে আফফান
রা. হতে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে
ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ
থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে আছে, নবীজী বলেছেন,
মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অযু করে, যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির
সঙ্গে বা পানির শেষ কাতরার সঙ্গে ওই সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দু
চোখ দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ
বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির
সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। এভাবে সে গুনাহ
থেকে পাকসাফ হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৪৪
অন্য হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে
কেরামের সামনে হাউযে কাউসারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, মানুষ
যেমন তার হাউয থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয় তেমনি আমিও সেদিন কিছু
মানুষকে সরিয়ে দিব। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের
চিনতে পারবেন? নবীজী ইরশাদ করলেন, বল তো, কারো যদি হাতে ও পায়ে সফেদ চিহ্ন
বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে
ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন হবে যা
অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অযুর
কারণে ঝলমল করতে থাকবে।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৬-২৪৯ অবলম্বনে।
অন্য একটি সহীহ হাদীসে আরো একটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হযরত উকবা ইবনে
আমের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি যে, নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে
অযু করে অতঃপর চেহারা-মন উভয়কে আল্লাহ অভিমুখী করে দণ্ডায়মান হয় এবং
করে দু রাকাত নামায আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে
যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৩৪
শিক্ষা
উপরের হাদীসগুলো থেকে অযু ও আনুষঙ্গিক কয়েকটি আমলের নির্দেশ পাওয়া
যায়-১. মাসনূন তরীকায় উত্তমরূপে অযু করা। ২. অযুর পর হাদীসে উল্লেখিত দুআ
পাঠ করা। ৩. দু রাকাত তাহিয়্যাতুল অযুর নামায পড়া। আমলগুলো খুবই সহজ
কিন্তু বিনিময়ে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি সুসংবাদ। ১. অযুর পানির সাথে
গুনাহসমূহ বের হয়ে যাবে। ২. কিয়ামতের দিন অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঝলমল
করবে। ৩. জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ৪. জান্নাতের সবকটি দরজা উন্মুক্ত করে
দেওয়া হবে। অতএব সকলের উচিত, মাসনূন তরীকায় আমলটি করে এসব পুরস্কার লাভে
প্রতিযোগিতা করা।
ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা
গরু-ছাগল জবাই করা সহানুভূতি ও সহমর্মিতা
পরিপন্থী নয়। কেননা তা আল্লাহ পাকের আদেশ পালন। যিনি সবকিছুর মালিক তিনি
আমাদের জন্য তা হালাল করেছেন। তাই এ ধরনের সহমর্মিতা আমরা প্রদর্শন করতে
পারব না। আমরা যদি এ ধরনের হামদর্দি দেখাই, তাহলে আমাদেরকে আল্লাহ পাকের
বিরাগভাজন হতে হবে। কেননা, গরু-মহিষ-বকরি আল্লাহ পাকের নির্দেশের সামনে
কিছুই না। যদি আমরা এসবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে এগুলোকে জবাই করা
থেকে বিরত থাকি, তাহলে আল্লাহ পাকের হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ হবে। এ প্রসঙ্গে
বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা মনে পড়ল।
সুলতান মাহমুদ ও তার ভৃত্য আয়াযের ঘটনা
এ প্রসঙ্গে মাওলানা রুমী রহ. বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বাদশাহ একবার তার পরম বিশ্বস্ত ভৃত্যের পরীক্ষার আয়োজন করলেন। একটি বড় দুর্লভ বহুমূল্য মোতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, একে ভেঙে ফেলো, প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিবেদন করল, এমন বহুমূল্য দুর্লভ মোতি আবার কোত্থেকে পাবেন? এভাবে একে একে অন্য সব আমীর-উমারা এবং মন্ত্রী ও সভাসদদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কারওই ভাঙার সাহস হলো না, সবশেষে আয়াযের পালা এলে আয়াযকে লক্ষ করে নির্দেশ দিলেন, এই মোতি ভেঙে ফেলো। আয়ায তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলল। ভেঙে ফেলতেই সুলতান ক্ষুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এ কী কাণ্ড করলে! উত্তরে আয়ায বলল, জাহাপনা ভুল হয়ে গেছে, মার্জনা করুন। সভাসদ ও মন্ত্রীবর্গ আয়াযকে ধিক্কার দিতে লাগল, নির্বোধ! তুমি মহামান্য বাদশাহর এমন দুর্লভ মোতি ভেঙে ফেললে! প্রতি উত্তরে আয়ায বলল, নির্বোধের দল! তোমরা তো শাহী ফরমানই ভেঙে ফেলেছ আর আমি তো শুধু সামান্য একটি মোতিই ভেঙেছি, শাহী ফরমানের সামনে যার কোনো মূল্যই নেই। সুধীমণ্ডলি! আমাদের তো এই হিম্মত ও সাহস নেই যে, আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা গরু জবাই করো আর আমরা বলব, গরু জবাই করো না। দ্বিতীয়ত দয়া দেখিয়ে গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়ার সরল অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা আল্লাহ পাকের চেয়ে বেশি দয়াবান অথচ মহান আল্লাহ পাকের দয়া ও মেহেরবানীর সঙ্গে আমদের দয়া-মায়ার কোনো তুলনাই চলে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন—
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَۃَ جَلْدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَۃٌ فِیْ دِیْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত করো, তোমরা যদি আল্লাহ পাক এবং পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক তাহলে তার বিধান বাস্তবায়নে যেন দয়া-মায়া কোনো অন্তরায় না হয়। -সূরা নূর : ২
সুতরাং আমাদের হুকুমের গোলাম হওয়া উচিত। যেখানে যে হুকুম হবে সেখানে তা-ই বিনা বাক্যব্যয়ে পালন করতে হবে। এই ছিল প্রকৃত হামদর্দি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বিবরণ। জোরগলায় জনদরদের দাবিদারদের যার হাওয়া-বাতাস পর্যন্তও লাগেনি, যারা সর্বদা সাজ-গোছ ও বেশভূষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা অভাবী মানুষদের জীর্ণদশার কারণে হীন ও তুচ্ছ মনে করে থাকে। এই পর্যন্ত আলোচনা ছিল বাহ্যিক আকার ও সূরত-সংশ্লিষ্ট।
এখন আসা যাক সম্পদের আলোচনা প্রসঙ্গে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সম্পদকেই নিজের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে। অথচ চিন্তা করা উচিত ছিল, সম্পদ কী পরিমাণ কারুনের কাছে ছিল, পক্ষান্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোনো সম্পদই ছিল না। সম্পদ থাকা যদি মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের বিষয় হতো তাহলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচে বেশি অর্থ-সম্পদ থাকত। আর কারুন হতো সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত ও নির্ধন। কিন্তু বর্তমানে অর্থ-সম্পদকেই যোগ্যতা, মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক মনে করা হয় তাই এর জন্য দীনকে বরবাদ করে দেওয়া হয়। বর্তমান যুগের মানসিকতা হলো, যেভাবে পার যে পথে পার অর্থ-সম্পদ উপার্জন করো। হোক তা বৈধ পথে কিংবা অবৈধ পথে। কারও প্রতি জুলুম করে হোক কিংবা দয়া করে। শিক্ষা-দীক্ষায় পাণ্ডিত্যের দাবিদার জনৈক ব্যক্তি সুদী কারবার করত। কেউ এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে উত্তর দেয়, মিয়াঁ! চুপ থাকো, হালাল-হারাম আবার কী জিনিস, এটা এমন এক যুগ যেখানে মুসলমানদের উচিত হলো যে পথেই তার হাতে অর্থ-সম্পদ আসুক তা যেন হাতছাড়া না করে। একে এবং এই শ্রেণির লোকদের আমি লক্ষ করে বলি, তোমাদের দাবি হলো, অর্থ-সম্পদ যেভাবেই হাতে আসে তা লুফে নাও তাহলে চুরি-ডাকাতির মাধ্যমেও তো অর্থ-সম্পদ হাতে আসে, এ কর্মটিও শুরু করে দাও। শরীয়তের বিধান যখন ত্যাগ করতে পেরেছ তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনও বর্জন কর তারপরে দেখো কী হয়। হায় আফসোস! জাগতিক মন্দ কর্ম থেকে তো জেলের ভয়ে বিরত থাকছি পক্ষান্তরে বিশ্বজগতের স্রষ্টার বিধান লঙ্ঘনের মতো চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছি।
কতিপয় লোকের বাহানা হলো, আমরা দীনের স্বার্থে জাগতিক উন্নতির চেষ্টা করি। জাগতিক উন্œতি ছাড়া দীনদারীও সুন্দর হয়না। কিন্তু এই বাণী তখন যথার্থ বলে বিবেচিত হতো যখন জাগতিক উন্নতির পাশাপাশি দীনদারীর উন্নতি সাধিত হতো। আমরা তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট দেখতে পাই জাগতিক উন্নতি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, দীনদারীতে সে পরিমাণ অবনতি হতে থাকে। সুধীমণ্ডলী! এ ধরনের জাগতিক উন্নতি কোনো কাজে লাগবে না। আখেরাতে কাজে না আসার বিষয়টি তো একেবারে পরিষ্কার। আমরা তো এর কাজে না আসা এবং পার্থিব উন্নতি দুনিয়াতেই চরম অনুতাপের কারণ হওয়াটা স্বচক্ষে দেখছি। কোনো দুনিয়াদার যখন মরতে লাগে তখন তাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, দুনিয়া উপার্জন ও জাগতিক উন্নতি সাধনের ব্যাপারে এ মুহূর্তে তোমার মতামত কী? এখনো কি তুমি তোমার পূর্ববর্তী মত ও ধ্যানধারণার ওপর স্থির আছ, না তাতে পরিবর্তন এসেছে? আমি কসম করে বলছি, তার পূর্বেকার মত ও দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পাল্টে যাবে। কেননা, এখন সে যে বাজারে গমন করছে সেখানে এ মুদ্রা অচল যার সঞ্চয়ের পেছনে সে সারা জীবন অপচয় করেছে, আর ওখানে যে মুদ্রা চলে তার ঝুলি তা থেকে একেবারে রিক্ত ও শূন্য। কারণ এতদিন সে ওই মুদ্রা সঞ্চয়কে অর্থহীন আখ্যায়িত করত। আর ওখানে ওই মুদ্রাই চলে যা বাহ্যত তোমাদের নিকট জাল মনে হয় অথচ বাস্তবে তা খাঁটি মুদ্রা। আর এখানকার মুদ্রা বাহ্যত রুপা মনে হলেও বাস্তবে তা লোহা। এখন চক্ষু মুদিত কিন্তু অতিসত্বর চক্ষু খুলে যাবে এবং হাকীকত ও প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিগোচর হবে। এখন যা ঘটছে সব ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মতো ঘটছে, যখন চক্ষু উন্মোচিত হয়ে যাবে তখন বুঝে আসবে আমরা আপাদমস্তক লোকসানে ডুবে ছিলাম।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা রুমী রহ. বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বাদশাহ একবার তার পরম বিশ্বস্ত ভৃত্যের পরীক্ষার আয়োজন করলেন। একটি বড় দুর্লভ বহুমূল্য মোতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, একে ভেঙে ফেলো, প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিবেদন করল, এমন বহুমূল্য দুর্লভ মোতি আবার কোত্থেকে পাবেন? এভাবে একে একে অন্য সব আমীর-উমারা এবং মন্ত্রী ও সভাসদদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কারওই ভাঙার সাহস হলো না, সবশেষে আয়াযের পালা এলে আয়াযকে লক্ষ করে নির্দেশ দিলেন, এই মোতি ভেঙে ফেলো। আয়ায তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলল। ভেঙে ফেলতেই সুলতান ক্ষুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এ কী কাণ্ড করলে! উত্তরে আয়ায বলল, জাহাপনা ভুল হয়ে গেছে, মার্জনা করুন। সভাসদ ও মন্ত্রীবর্গ আয়াযকে ধিক্কার দিতে লাগল, নির্বোধ! তুমি মহামান্য বাদশাহর এমন দুর্লভ মোতি ভেঙে ফেললে! প্রতি উত্তরে আয়ায বলল, নির্বোধের দল! তোমরা তো শাহী ফরমানই ভেঙে ফেলেছ আর আমি তো শুধু সামান্য একটি মোতিই ভেঙেছি, শাহী ফরমানের সামনে যার কোনো মূল্যই নেই। সুধীমণ্ডলি! আমাদের তো এই হিম্মত ও সাহস নেই যে, আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা গরু জবাই করো আর আমরা বলব, গরু জবাই করো না। দ্বিতীয়ত দয়া দেখিয়ে গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়ার সরল অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা আল্লাহ পাকের চেয়ে বেশি দয়াবান অথচ মহান আল্লাহ পাকের দয়া ও মেহেরবানীর সঙ্গে আমদের দয়া-মায়ার কোনো তুলনাই চলে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন—
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَۃَ جَلْدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَۃٌ فِیْ دِیْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত করো, তোমরা যদি আল্লাহ পাক এবং পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক তাহলে তার বিধান বাস্তবায়নে যেন দয়া-মায়া কোনো অন্তরায় না হয়। -সূরা নূর : ২
সুতরাং আমাদের হুকুমের গোলাম হওয়া উচিত। যেখানে যে হুকুম হবে সেখানে তা-ই বিনা বাক্যব্যয়ে পালন করতে হবে। এই ছিল প্রকৃত হামদর্দি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বিবরণ। জোরগলায় জনদরদের দাবিদারদের যার হাওয়া-বাতাস পর্যন্তও লাগেনি, যারা সর্বদা সাজ-গোছ ও বেশভূষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা অভাবী মানুষদের জীর্ণদশার কারণে হীন ও তুচ্ছ মনে করে থাকে। এই পর্যন্ত আলোচনা ছিল বাহ্যিক আকার ও সূরত-সংশ্লিষ্ট।
এখন আসা যাক সম্পদের আলোচনা প্রসঙ্গে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সম্পদকেই নিজের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে। অথচ চিন্তা করা উচিত ছিল, সম্পদ কী পরিমাণ কারুনের কাছে ছিল, পক্ষান্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোনো সম্পদই ছিল না। সম্পদ থাকা যদি মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের বিষয় হতো তাহলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচে বেশি অর্থ-সম্পদ থাকত। আর কারুন হতো সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত ও নির্ধন। কিন্তু বর্তমানে অর্থ-সম্পদকেই যোগ্যতা, মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক মনে করা হয় তাই এর জন্য দীনকে বরবাদ করে দেওয়া হয়। বর্তমান যুগের মানসিকতা হলো, যেভাবে পার যে পথে পার অর্থ-সম্পদ উপার্জন করো। হোক তা বৈধ পথে কিংবা অবৈধ পথে। কারও প্রতি জুলুম করে হোক কিংবা দয়া করে। শিক্ষা-দীক্ষায় পাণ্ডিত্যের দাবিদার জনৈক ব্যক্তি সুদী কারবার করত। কেউ এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে উত্তর দেয়, মিয়াঁ! চুপ থাকো, হালাল-হারাম আবার কী জিনিস, এটা এমন এক যুগ যেখানে মুসলমানদের উচিত হলো যে পথেই তার হাতে অর্থ-সম্পদ আসুক তা যেন হাতছাড়া না করে। একে এবং এই শ্রেণির লোকদের আমি লক্ষ করে বলি, তোমাদের দাবি হলো, অর্থ-সম্পদ যেভাবেই হাতে আসে তা লুফে নাও তাহলে চুরি-ডাকাতির মাধ্যমেও তো অর্থ-সম্পদ হাতে আসে, এ কর্মটিও শুরু করে দাও। শরীয়তের বিধান যখন ত্যাগ করতে পেরেছ তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনও বর্জন কর তারপরে দেখো কী হয়। হায় আফসোস! জাগতিক মন্দ কর্ম থেকে তো জেলের ভয়ে বিরত থাকছি পক্ষান্তরে বিশ্বজগতের স্রষ্টার বিধান লঙ্ঘনের মতো চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছি।
কতিপয় লোকের বাহানা হলো, আমরা দীনের স্বার্থে জাগতিক উন্নতির চেষ্টা করি। জাগতিক উন্œতি ছাড়া দীনদারীও সুন্দর হয়না। কিন্তু এই বাণী তখন যথার্থ বলে বিবেচিত হতো যখন জাগতিক উন্নতির পাশাপাশি দীনদারীর উন্নতি সাধিত হতো। আমরা তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট দেখতে পাই জাগতিক উন্নতি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, দীনদারীতে সে পরিমাণ অবনতি হতে থাকে। সুধীমণ্ডলী! এ ধরনের জাগতিক উন্নতি কোনো কাজে লাগবে না। আখেরাতে কাজে না আসার বিষয়টি তো একেবারে পরিষ্কার। আমরা তো এর কাজে না আসা এবং পার্থিব উন্নতি দুনিয়াতেই চরম অনুতাপের কারণ হওয়াটা স্বচক্ষে দেখছি। কোনো দুনিয়াদার যখন মরতে লাগে তখন তাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, দুনিয়া উপার্জন ও জাগতিক উন্নতি সাধনের ব্যাপারে এ মুহূর্তে তোমার মতামত কী? এখনো কি তুমি তোমার পূর্ববর্তী মত ও ধ্যানধারণার ওপর স্থির আছ, না তাতে পরিবর্তন এসেছে? আমি কসম করে বলছি, তার পূর্বেকার মত ও দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পাল্টে যাবে। কেননা, এখন সে যে বাজারে গমন করছে সেখানে এ মুদ্রা অচল যার সঞ্চয়ের পেছনে সে সারা জীবন অপচয় করেছে, আর ওখানে যে মুদ্রা চলে তার ঝুলি তা থেকে একেবারে রিক্ত ও শূন্য। কারণ এতদিন সে ওই মুদ্রা সঞ্চয়কে অর্থহীন আখ্যায়িত করত। আর ওখানে ওই মুদ্রাই চলে যা বাহ্যত তোমাদের নিকট জাল মনে হয় অথচ বাস্তবে তা খাঁটি মুদ্রা। আর এখানকার মুদ্রা বাহ্যত রুপা মনে হলেও বাস্তবে তা লোহা। এখন চক্ষু মুদিত কিন্তু অতিসত্বর চক্ষু খুলে যাবে এবং হাকীকত ও প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিগোচর হবে। এখন যা ঘটছে সব ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মতো ঘটছে, যখন চক্ষু উন্মোচিত হয়ে যাবে তখন বুঝে আসবে আমরা আপাদমস্তক লোকসানে ডুবে ছিলাম।
একটি রসাত্মক গল্প
জনৈক ব্যক্তি সর্বদা বিছানায় পেশাব করে দিত, বিরক্ত হয়ে স্ত্রী একদিন বলেই বসল, কী অলুক্ষণে পুরুষ তুমি, প্রতি রাতেই বিছানায় পেশাব করে দাও। স্বামী উত্তর দিল, প্রতি রাতেই স্বপ্নে শয়তানের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে ভ্রমণ করাতে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যখন আমার পেশাবের বেগ হয় তখন আমাকে কোথাও বসিয়ে দিয়ে পেশাবের কাজ সেরে নিতে বলে। তাই আমি পেশাব করে দিই। স্ত্রী বলল, বেশ! শয়তান তো জ্বিন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত আর জিনরা তো বড় বড় কাজ করতে পারে। এদিকে আমাদের কত অনটনের সংসার, তুমি তার কাছে আবদার কোরো, আমি বড় গরীব মানুষ, আমার সংসার বড় অভাবের। আমাকে কোথাও থেকে কিছু টাকা-পয়সা জোগাড় করে দাও। স্বামী বলল, ঠিক আছে। আবার যদি স্বপ্নে সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে অবশ্যই এ আবদার জানাব। প্রতিদিনের মতো ওই রাতেও শয়তান হাজির হলে সে তাকে বলল, শয়তান কোথাকার! আমাকে কেবল পেশাবই করাতে থাকিস, এদিকে অভাব অনটনে আমাদের সংসারের অবস্থা নাজেহাল। কোথাও থেকে আমাদের কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দিতে পারিস না! শয়তান বলল, এ কথা আমাকে আগে কেন বলনি। চলো, তোমাকে বহু অর্থকড়ির ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে তাকে এক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখান থেকে বড় একটি টাকার বস্তা তার মাথায় চাপিয়ে দিল। ওই বোঝার ভার বহন করতে না পেরে বেচারা পায়খানাই করে দিল। এরপরেই চক্ষু খুলে গেল। দেখতে পেল বিছানা পেশাব-পায়খানায় একাকার। টাকার বস্তার নাম-গন্ধও নেই। গল্পটি রসাত্মক হলেও এর থেকে বড় তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফলাফলে উপনীত হওয়া যায়। তা হলো ইহজগতের দৃষ্টান্ত হুবহু স্বপ্নের মতো। জাগতিক উন্নতি সাধনে বিভোর লোকদের দৃষ্টান্ত গল্পে বর্ণিত স্বাপ্নিকের মতো, আর দুনিয়া হলো মলমূত্র। এখন আমরা গাফলত ও উদাসীনতার ঘোরে বিভোর। আমাদের কোনো খবর নেই, আমরা কী সঞ্চয় করছি, মুদিত চক্ষু যখন উন্মোচিত হবে অর্থ্যাৎ মৃত্যু এসে হাজির হবে তখন সম্যক অবগতি লাভ হবে যে, তা ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি তো নয়ই বরং মলমূত্রের ভাগাড়। তখন তারা বলবে, আরে! আমরা তো বড় ধোঁকায় পড়েছিলাম, হিরা-মোতি, পান্না মনে করে যা সঞ্চয় করেছিলাম এখন তো দেখছি এসবই পাথরকুচি ও কঙ্কর!
জনৈক ব্যক্তি সর্বদা বিছানায় পেশাব করে দিত, বিরক্ত হয়ে স্ত্রী একদিন বলেই বসল, কী অলুক্ষণে পুরুষ তুমি, প্রতি রাতেই বিছানায় পেশাব করে দাও। স্বামী উত্তর দিল, প্রতি রাতেই স্বপ্নে শয়তানের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে ভ্রমণ করাতে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যখন আমার পেশাবের বেগ হয় তখন আমাকে কোথাও বসিয়ে দিয়ে পেশাবের কাজ সেরে নিতে বলে। তাই আমি পেশাব করে দিই। স্ত্রী বলল, বেশ! শয়তান তো জ্বিন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত আর জিনরা তো বড় বড় কাজ করতে পারে। এদিকে আমাদের কত অনটনের সংসার, তুমি তার কাছে আবদার কোরো, আমি বড় গরীব মানুষ, আমার সংসার বড় অভাবের। আমাকে কোথাও থেকে কিছু টাকা-পয়সা জোগাড় করে দাও। স্বামী বলল, ঠিক আছে। আবার যদি স্বপ্নে সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে অবশ্যই এ আবদার জানাব। প্রতিদিনের মতো ওই রাতেও শয়তান হাজির হলে সে তাকে বলল, শয়তান কোথাকার! আমাকে কেবল পেশাবই করাতে থাকিস, এদিকে অভাব অনটনে আমাদের সংসারের অবস্থা নাজেহাল। কোথাও থেকে আমাদের কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দিতে পারিস না! শয়তান বলল, এ কথা আমাকে আগে কেন বলনি। চলো, তোমাকে বহু অর্থকড়ির ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে তাকে এক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখান থেকে বড় একটি টাকার বস্তা তার মাথায় চাপিয়ে দিল। ওই বোঝার ভার বহন করতে না পেরে বেচারা পায়খানাই করে দিল। এরপরেই চক্ষু খুলে গেল। দেখতে পেল বিছানা পেশাব-পায়খানায় একাকার। টাকার বস্তার নাম-গন্ধও নেই। গল্পটি রসাত্মক হলেও এর থেকে বড় তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফলাফলে উপনীত হওয়া যায়। তা হলো ইহজগতের দৃষ্টান্ত হুবহু স্বপ্নের মতো। জাগতিক উন্নতি সাধনে বিভোর লোকদের দৃষ্টান্ত গল্পে বর্ণিত স্বাপ্নিকের মতো, আর দুনিয়া হলো মলমূত্র। এখন আমরা গাফলত ও উদাসীনতার ঘোরে বিভোর। আমাদের কোনো খবর নেই, আমরা কী সঞ্চয় করছি, মুদিত চক্ষু যখন উন্মোচিত হবে অর্থ্যাৎ মৃত্যু এসে হাজির হবে তখন সম্যক অবগতি লাভ হবে যে, তা ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি তো নয়ই বরং মলমূত্রের ভাগাড়। তখন তারা বলবে, আরে! আমরা তো বড় ধোঁকায় পড়েছিলাম, হিরা-মোতি, পান্না মনে করে যা সঞ্চয় করেছিলাম এখন তো দেখছি এসবই পাথরকুচি ও কঙ্কর!
কী ধরনের দুনিয়া ও জাগতিক উন্নতি নিন্দনীয়
কতিপয় মানুষ সংশয় প্রকাশ করে বলে, হুযুররা দুনিয়া বর্জন করতে উৎসাহিত করে অথচ নিজেরাই সম্পদ সঞ্চয় করে। আর আমরা যখন দুনিয়ার দীনতা হীনতা জানতে পারি তখন তা নিজ থেকেই বর্জন করি। আর দুনিয়া এলেও দেদারছে বিলিয়ে দিই। এই সংশয়ের উত্তর হলো, আমরা ওই দুনিয়াকে নিন্দনীয় বলি যার দ্বারা মানুষ গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবে যায়। আর ওই দুনিয়াদারদের নিন্দা করি যারা দুনিয়া নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, পরিণামে দীনকেই বরবাদ করে ফেলে। এমনকি বৈধভাবে যদি পার্থিব সম্পদ প্রয়োজন পরিমাণ হয় কিংবা প্রয়োজন-অতিরিক্ত হয় আর তা ব্যক্তিকে গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবিয়ে না দেয়, তা নিন্দনীয় নয়; বরং প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা একান্ত প্রয়োজনভুক্ত।
মোল্লা জামী রহ. যখন পীরের সন্ধানে খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রহ. এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, খাজা সাহেবের দরবার বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ দেখতে পেলেন। সর্বপ্রকার পার্থিব ঐশ্বর্যে তা সুশোভিত। মোল্লা জামী এই দৃশ্য অবলোকন করে বড় মর্মাহত হলেন, জোশ ও আবেগের উদ্দীপনায় বে-এখতিয়ার তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
এ কথা বলে অনুতাপ-দগ্ধ হৃদয়ে মসজিদে গিয়ে শুয়ে রইলেন। স্বপ্নে দেখলেন কেয়ামত কায়েম হয়ে গেছে। হাশরের ময়দানে সবাই উপস্থিত। আর মোল্লা জামী জনৈক পাওনাদারের দেনা আদায় নিয়ে বড়ই অস্থির ও পেরেশান। অদূরেই খাজা সাহেব বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করছেন। তাকে অস্থির ও পেরেশান দেখে প্রশ্ন করলেন, দরবেশজী! পাওনা পরিশোধ নিয়ে আপনাকে বড়ই অস্থির ও পেরেশান দেখাচ্ছে যে! আমি এখানে যে রত্ন-ভাণ্ডার সঞ্চিত রেখেছি তা থেকে আপনার পাওনা পরিশোধ করে দিন। এরপরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। খাজা সাহেব তখন মসজিদে আসছিলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হয়ে হযরতের পদতলে লুটিয়ে পড়ে নিবেদন করলেন-আমার বে-আদবী মার্জনা করুন। খাজা সাহেব উত্তর দিলেন, স্বপ্ন ও কল্পনা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে, এসবের কী গ্রহণযোগ্যতা আছে! এতে মোল্লা সাহেবের ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। তারপর খাজা সাহেব বললেন, ঐ পঙ্ক্তিটি কী ছিল যা আপনি পড়েছিলেন? তিনি নিবেদন করলেন, হযরত সেটা তো ছিল আমার নির্বুদ্ধিতা। হযরত বললেন, না! আমি তা-ই শুনতে চাই। মোল্লা জামী বললেন, এখানকার ঐশ্বর্য দেখে আমার মুখ দিয়ে বে-এখতিয়ার বেরিয়ে পড়েছিল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
খাজা সাহেব বললেন, বক্তব্য ঠিক আছে তবে তা অসম্পূর্ণ। এর পরে এ চরণটি যোগ করে দিন-
اگر دارد برائے دوست دارد
পার্থিব ঐশ্বর্যের মাঝে থাকলেও প্রিয়তম (আল্লাহ পাকের) জন্যই থাকে। অর্থাৎ পার্থিব ধন-সম্পদ আল্লাহ পাকের জন্যই গচ্ছিত রাখে।
সারকথা হলো-পার্থিব ধনসম্পদ যদি দীনের জন্য হয় তাহলে তা দুনিয়া নয়; বরং তাও দীন। ধন-সম্পদ ও পার্থিব ঐশ্বর্যের দৃষ্টান্ত হলো পানির মতো আর হৃদয়ের দৃষ্টান্ত হলো নৌকার মতো। পানি যদি নৌকার ভেতরে প্রবেশ করে তা নৌকাকে ডুবিয়ে দেয়, নৌকার বাইরে থাকলে তা নৌকা চলাচলে সহায়ক হয়। তদ্রুপ ধন-সম্পদ যদি হৃদয়ের ভেতরে থাকে অর্থাৎ এর মোহ ও আকর্ষণ অন্তরে আসন গেড়ে নেয়, তা ধ্বংসের কারণ হয়। আর যদি অন্তরের বাইরে থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা হয় না। মোটকথা প্রয়োজন-পরিমাণ সম্পদ তো খুবই জরুরি অন্যথায় অস্থির ও পেরেশান থাকতে হয়। আর না হয় এমন অবস্থা হয় যে, একদিকে নামাযের নিয়ত বাঁধে আরেক দিকে অন্তরে এই খেয়াল ঘুরপাক খেতে থাকে যে, সকালে বিবি-বাচ্চারা কী খাবে। তো ধন-সম্পদ উপার্জন নিষিদ্ধ ও দূষণীয় নয়; বরং নিষিদ্ধ ও দূষণীয় হলো ওই সম্পদ যা গাফলত ও উদাসীনতার কারণ হয় এবং যার কারণে গরীবদের হীন ও তুচ্ছ মনে হতে থাকে।
এরপর বলেন-
ولكن ينظر إلى إعمالكم ونياتكم
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের আমল এবং নিয়ত দেখেন। আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, জাহেরী সূরত ও সম্পদের উপর নয়। সুধীমণ্ডলী! এ বিষয়টি যখন প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন আপন আপন নিয়ত ও আমল সুন্দর ও উন্নত করার চেষ্টা করুন।
প্রত্যেক যুগের মানুষ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, এ যুগের রোগ-ব্যাধির অন্যতম একটি ব্যাধি হলো—আমাদের দৃষ্টি ও মনোযোগ পুরোপুরি দুনিয়ামুখী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে সূরত ও আকার এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, আর যে জিনিস মূল ও আসল, যার উপর নাজাত ও মুক্তির ভিত্তি, তার প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ নেই। তা হলো দীন, যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ তো এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত।
কতিপয় মানুষ সংশয় প্রকাশ করে বলে, হুযুররা দুনিয়া বর্জন করতে উৎসাহিত করে অথচ নিজেরাই সম্পদ সঞ্চয় করে। আর আমরা যখন দুনিয়ার দীনতা হীনতা জানতে পারি তখন তা নিজ থেকেই বর্জন করি। আর দুনিয়া এলেও দেদারছে বিলিয়ে দিই। এই সংশয়ের উত্তর হলো, আমরা ওই দুনিয়াকে নিন্দনীয় বলি যার দ্বারা মানুষ গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবে যায়। আর ওই দুনিয়াদারদের নিন্দা করি যারা দুনিয়া নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, পরিণামে দীনকেই বরবাদ করে ফেলে। এমনকি বৈধভাবে যদি পার্থিব সম্পদ প্রয়োজন পরিমাণ হয় কিংবা প্রয়োজন-অতিরিক্ত হয় আর তা ব্যক্তিকে গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবিয়ে না দেয়, তা নিন্দনীয় নয়; বরং প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা একান্ত প্রয়োজনভুক্ত।
মোল্লা জামী রহ. যখন পীরের সন্ধানে খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রহ. এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, খাজা সাহেবের দরবার বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ দেখতে পেলেন। সর্বপ্রকার পার্থিব ঐশ্বর্যে তা সুশোভিত। মোল্লা জামী এই দৃশ্য অবলোকন করে বড় মর্মাহত হলেন, জোশ ও আবেগের উদ্দীপনায় বে-এখতিয়ার তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
এ কথা বলে অনুতাপ-দগ্ধ হৃদয়ে মসজিদে গিয়ে শুয়ে রইলেন। স্বপ্নে দেখলেন কেয়ামত কায়েম হয়ে গেছে। হাশরের ময়দানে সবাই উপস্থিত। আর মোল্লা জামী জনৈক পাওনাদারের দেনা আদায় নিয়ে বড়ই অস্থির ও পেরেশান। অদূরেই খাজা সাহেব বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করছেন। তাকে অস্থির ও পেরেশান দেখে প্রশ্ন করলেন, দরবেশজী! পাওনা পরিশোধ নিয়ে আপনাকে বড়ই অস্থির ও পেরেশান দেখাচ্ছে যে! আমি এখানে যে রত্ন-ভাণ্ডার সঞ্চিত রেখেছি তা থেকে আপনার পাওনা পরিশোধ করে দিন। এরপরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। খাজা সাহেব তখন মসজিদে আসছিলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হয়ে হযরতের পদতলে লুটিয়ে পড়ে নিবেদন করলেন-আমার বে-আদবী মার্জনা করুন। খাজা সাহেব উত্তর দিলেন, স্বপ্ন ও কল্পনা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে, এসবের কী গ্রহণযোগ্যতা আছে! এতে মোল্লা সাহেবের ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। তারপর খাজা সাহেব বললেন, ঐ পঙ্ক্তিটি কী ছিল যা আপনি পড়েছিলেন? তিনি নিবেদন করলেন, হযরত সেটা তো ছিল আমার নির্বুদ্ধিতা। হযরত বললেন, না! আমি তা-ই শুনতে চাই। মোল্লা জামী বললেন, এখানকার ঐশ্বর্য দেখে আমার মুখ দিয়ে বে-এখতিয়ার বেরিয়ে পড়েছিল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
খাজা সাহেব বললেন, বক্তব্য ঠিক আছে তবে তা অসম্পূর্ণ। এর পরে এ চরণটি যোগ করে দিন-
اگر دارد برائے دوست دارد
পার্থিব ঐশ্বর্যের মাঝে থাকলেও প্রিয়তম (আল্লাহ পাকের) জন্যই থাকে। অর্থাৎ পার্থিব ধন-সম্পদ আল্লাহ পাকের জন্যই গচ্ছিত রাখে।
সারকথা হলো-পার্থিব ধনসম্পদ যদি দীনের জন্য হয় তাহলে তা দুনিয়া নয়; বরং তাও দীন। ধন-সম্পদ ও পার্থিব ঐশ্বর্যের দৃষ্টান্ত হলো পানির মতো আর হৃদয়ের দৃষ্টান্ত হলো নৌকার মতো। পানি যদি নৌকার ভেতরে প্রবেশ করে তা নৌকাকে ডুবিয়ে দেয়, নৌকার বাইরে থাকলে তা নৌকা চলাচলে সহায়ক হয়। তদ্রুপ ধন-সম্পদ যদি হৃদয়ের ভেতরে থাকে অর্থাৎ এর মোহ ও আকর্ষণ অন্তরে আসন গেড়ে নেয়, তা ধ্বংসের কারণ হয়। আর যদি অন্তরের বাইরে থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা হয় না। মোটকথা প্রয়োজন-পরিমাণ সম্পদ তো খুবই জরুরি অন্যথায় অস্থির ও পেরেশান থাকতে হয়। আর না হয় এমন অবস্থা হয় যে, একদিকে নামাযের নিয়ত বাঁধে আরেক দিকে অন্তরে এই খেয়াল ঘুরপাক খেতে থাকে যে, সকালে বিবি-বাচ্চারা কী খাবে। তো ধন-সম্পদ উপার্জন নিষিদ্ধ ও দূষণীয় নয়; বরং নিষিদ্ধ ও দূষণীয় হলো ওই সম্পদ যা গাফলত ও উদাসীনতার কারণ হয় এবং যার কারণে গরীবদের হীন ও তুচ্ছ মনে হতে থাকে।
এরপর বলেন-
ولكن ينظر إلى إعمالكم ونياتكم
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের আমল এবং নিয়ত দেখেন। আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, জাহেরী সূরত ও সম্পদের উপর নয়। সুধীমণ্ডলী! এ বিষয়টি যখন প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন আপন আপন নিয়ত ও আমল সুন্দর ও উন্নত করার চেষ্টা করুন।
প্রত্যেক যুগের মানুষ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, এ যুগের রোগ-ব্যাধির অন্যতম একটি ব্যাধি হলো—আমাদের দৃষ্টি ও মনোযোগ পুরোপুরি দুনিয়ামুখী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে সূরত ও আকার এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, আর যে জিনিস মূল ও আসল, যার উপর নাজাত ও মুক্তির ভিত্তি, তার প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ নেই। তা হলো দীন, যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ তো এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত।
বর্তমানে দীনদারদের দৃষ্টিও সূরতের উপর
আমরা দেখতে পাই যারা নিজেকে দীনদার দাবি করে তাদের মধ্যেও এ রোগ বিদ্যমান। তাদের কাছে দুনিয়াদারদের সম্মান ও মর্যাদা যতটা দীনদারদের মর্যাদা ততটা নয়। উদাহরণত, তাদের নিকট যদি বিত্তবৈভবের অধিকারী কোনো দুনিয়াদারের আগমন ঘটে পাশাপাশি এমন কোনো দীনদার ব্যক্তি আগমন করে, যার না বিত্তবৈভব আছে, না তার পীর-বুযুর্গ হওয়ার স্বীকৃতি আছে, না কোনো বিশেষ যোগ্যতা আছে, হুযুর বলা হয় অথচ প্রয়োজন-পরিমাণ ইলম প্রথাগত লেখা-পড়া ছাড়াই অর্জন করেছে যেমন অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন। উক্ত ব্যক্তি পরহেজগার ও নেককার এবং তার জাহেরী অবস্থা হলো তার চেহারা-সূরত, আকার-আকৃতি আকর্ষণীয় নয়। লেবাস-পোশাকও জীর্ণ-শীর্ণ, গোষ্ঠী ও বংশেও ততটা অভিজাত নয়; বরং বংশেও তাকে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। মোটকথা, বাহ্যিক ঠাঁটবাট কিছুই নেই। পক্ষান্তরে আরেক ব্যক্তি দুনিয়াদার বিত্তবৈভবের অধিকারী, দীনের চিহ্নমাত্র তার মধ্যে নেই। না নেককার পরহেজগার, আর না শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে বংশে ততটা অগ্রগামী, এমন দুব্যক্তি আগে-পরে-নিজেকে দীনদার দাবি করে-এমন কোনো ব্যক্তির নিকট যায় তাহলে আমি কসম করে বলতে পারি অন্যের কথা কী বলব স্বয়ং নিজের কথাই বলছি ওই দুনিয়াদারের যা ইজ্জত সম্মান আমার চোখে হবে তা উল্লিখিত দীনদারের হবে না। বড় নির্মম সত্য হলো-ব্যাপকভাবে সাধারণত আমাদের স্বভাব-প্রকৃতি দুনিয়ার মোহে আবিষ্ট। বাহ্যিক সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পদই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়।
আমরা দেখতে পাই যারা নিজেকে দীনদার দাবি করে তাদের মধ্যেও এ রোগ বিদ্যমান। তাদের কাছে দুনিয়াদারদের সম্মান ও মর্যাদা যতটা দীনদারদের মর্যাদা ততটা নয়। উদাহরণত, তাদের নিকট যদি বিত্তবৈভবের অধিকারী কোনো দুনিয়াদারের আগমন ঘটে পাশাপাশি এমন কোনো দীনদার ব্যক্তি আগমন করে, যার না বিত্তবৈভব আছে, না তার পীর-বুযুর্গ হওয়ার স্বীকৃতি আছে, না কোনো বিশেষ যোগ্যতা আছে, হুযুর বলা হয় অথচ প্রয়োজন-পরিমাণ ইলম প্রথাগত লেখা-পড়া ছাড়াই অর্জন করেছে যেমন অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন। উক্ত ব্যক্তি পরহেজগার ও নেককার এবং তার জাহেরী অবস্থা হলো তার চেহারা-সূরত, আকার-আকৃতি আকর্ষণীয় নয়। লেবাস-পোশাকও জীর্ণ-শীর্ণ, গোষ্ঠী ও বংশেও ততটা অভিজাত নয়; বরং বংশেও তাকে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। মোটকথা, বাহ্যিক ঠাঁটবাট কিছুই নেই। পক্ষান্তরে আরেক ব্যক্তি দুনিয়াদার বিত্তবৈভবের অধিকারী, দীনের চিহ্নমাত্র তার মধ্যে নেই। না নেককার পরহেজগার, আর না শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে বংশে ততটা অগ্রগামী, এমন দুব্যক্তি আগে-পরে-নিজেকে দীনদার দাবি করে-এমন কোনো ব্যক্তির নিকট যায় তাহলে আমি কসম করে বলতে পারি অন্যের কথা কী বলব স্বয়ং নিজের কথাই বলছি ওই দুনিয়াদারের যা ইজ্জত সম্মান আমার চোখে হবে তা উল্লিখিত দীনদারের হবে না। বড় নির্মম সত্য হলো-ব্যাপকভাবে সাধারণত আমাদের স্বভাব-প্রকৃতি দুনিয়ার মোহে আবিষ্ট। বাহ্যিক সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পদই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়।
বুযুর্গদের ভক্তি এবং নফসের চালাকি
মানুষ বুযুর্গদের ভক্তি ও সম্মান তখনই প্রদর্শন করে যখন তার জাহেরী ইজ্জত সম্মান থাকে। যদিও সে ইজ্জত সম্মান দীনের কারণেই হোক। তাই তো বুযুর্গদের মধ্য থেকে ওই বুযুর্গকেই ইজ্জত সম্মান করা হয় যাকে দু’চারজন সম্মান করে। কারণ, তাকে সম্মান করতে এবং তার খেদমতে নিজেকে ছোট করতে লজ্জাবোধ হয় না। এটা নফসের বড় গভীর ও সূ² কূটকৌশল। বাহ্যত তো এই সম্মান ও খেদমতে বড় সৌভাগ্য ও দীনদারী মনে হয়, কিন্তু এতে নফসের কুটিল চাল হলো—সে ওই বুযুর্গকে এ কারণে সম্মান করে যে, এতে লোকদের মাঝে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একারণেই নফস এই সম্মান ও খেদমত দ্বারা খুশি হয়, কোনো প্রকার দ্বিধা ও লজ্জা অনুভব করে না। তাই তো যদি দু’জন ব্যক্তি উস্তাদ হন, একজন প্রসিদ্ধ আর একজন অপ্রসিদ্ধ তাহলে আমরা নিজেদের প্রসিদ্ধ উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিই। অখ্যাত উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়।
মানুষ বুযুর্গদের ভক্তি ও সম্মান তখনই প্রদর্শন করে যখন তার জাহেরী ইজ্জত সম্মান থাকে। যদিও সে ইজ্জত সম্মান দীনের কারণেই হোক। তাই তো বুযুর্গদের মধ্য থেকে ওই বুযুর্গকেই ইজ্জত সম্মান করা হয় যাকে দু’চারজন সম্মান করে। কারণ, তাকে সম্মান করতে এবং তার খেদমতে নিজেকে ছোট করতে লজ্জাবোধ হয় না। এটা নফসের বড় গভীর ও সূ² কূটকৌশল। বাহ্যত তো এই সম্মান ও খেদমতে বড় সৌভাগ্য ও দীনদারী মনে হয়, কিন্তু এতে নফসের কুটিল চাল হলো—সে ওই বুযুর্গকে এ কারণে সম্মান করে যে, এতে লোকদের মাঝে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একারণেই নফস এই সম্মান ও খেদমত দ্বারা খুশি হয়, কোনো প্রকার দ্বিধা ও লজ্জা অনুভব করে না। তাই তো যদি দু’জন ব্যক্তি উস্তাদ হন, একজন প্রসিদ্ধ আর একজন অপ্রসিদ্ধ তাহলে আমরা নিজেদের প্রসিদ্ধ উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিই। অখ্যাত উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়।
লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা বড় মারাত্মক গোনাহ
এজন্যই বুযুর্গানে দীন লিখেছেন, রিয়া ও লৌকিকতা এত মারাত্মক যে, তা অন্তর থেকে সকল রোগের শেষে বের হয়, তবে হ্যাঁ, দুনিয়াদারদের সম্মান যদি নিছক দুনিয়ার কারণে না হয়; বরং তার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য হয় কিংবা তার মনোরঞ্জনের জন্য হয় আর তাতে গরীবের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায় তাহলে তা দূষণীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দীনদারীও নিছক জাহেরী ও বাহ্যিক দীনদারী, খাঁটি নির্ভেজাল দীনদারী আমাদের মধ্যে খুবই কম। আল্লাহ পাক নিজেই বলেন-
وَ قَلِیْلٌ مِّنْ عِبَادِیَ الشَّكُوْرُ
শোকরগোযার বান্দা খুবই কম।
অধিকাংশের দৃষ্টিই জাহের তথা বাহ্যিক অবস্থার উপর অথচ এই বাহ্যিকতাকে বড় করে দেখাটাই হলো দুনিয়া আর এই ধিক্কৃত দুনিয়ার ব্যাপারে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অমর বাণী হলো—গোটা দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ পাকের নিকট একটি মাছির পাখা বরাবরও হতো আল্লাহ তাআলা কোনো কাফেরকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিতেন না। সারকথা হলো-জাহেরী ইজ্জত সম্মান, চাই তা বংশীয় কিংবা অর্থ-সম্পদ বা বিদ্যা-বুদ্ধির সুবাদে অর্জিত হোক। এসবের কারণে যদি দুনিয়াবী সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে এসবই দুনিয়া (আর একেই সূরত ও আকৃতি এবং অর্থ-সম্পদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে) এসবের প্রতি লক্ষ করা উচিত নয়। আর দীন যাকে আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে তার উপর দৃষ্টি থাকা চাই। এমনকি কাউকে যদি ভক্তি ও সম্মান করতে হয় তাহলে তা কেবল দীনের কারণেই করা উচিত।
এজন্যই বুযুর্গানে দীন লিখেছেন, রিয়া ও লৌকিকতা এত মারাত্মক যে, তা অন্তর থেকে সকল রোগের শেষে বের হয়, তবে হ্যাঁ, দুনিয়াদারদের সম্মান যদি নিছক দুনিয়ার কারণে না হয়; বরং তার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য হয় কিংবা তার মনোরঞ্জনের জন্য হয় আর তাতে গরীবের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায় তাহলে তা দূষণীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দীনদারীও নিছক জাহেরী ও বাহ্যিক দীনদারী, খাঁটি নির্ভেজাল দীনদারী আমাদের মধ্যে খুবই কম। আল্লাহ পাক নিজেই বলেন-
وَ قَلِیْلٌ مِّنْ عِبَادِیَ الشَّكُوْرُ
শোকরগোযার বান্দা খুবই কম।
অধিকাংশের দৃষ্টিই জাহের তথা বাহ্যিক অবস্থার উপর অথচ এই বাহ্যিকতাকে বড় করে দেখাটাই হলো দুনিয়া আর এই ধিক্কৃত দুনিয়ার ব্যাপারে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অমর বাণী হলো—গোটা দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ পাকের নিকট একটি মাছির পাখা বরাবরও হতো আল্লাহ তাআলা কোনো কাফেরকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিতেন না। সারকথা হলো-জাহেরী ইজ্জত সম্মান, চাই তা বংশীয় কিংবা অর্থ-সম্পদ বা বিদ্যা-বুদ্ধির সুবাদে অর্জিত হোক। এসবের কারণে যদি দুনিয়াবী সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে এসবই দুনিয়া (আর একেই সূরত ও আকৃতি এবং অর্থ-সম্পদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে) এসবের প্রতি লক্ষ করা উচিত নয়। আর দীন যাকে আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে তার উপর দৃষ্টি থাকা চাই। এমনকি কাউকে যদি ভক্তি ও সম্মান করতে হয় তাহলে তা কেবল দীনের কারণেই করা উচিত।
কোনো বুযুর্গের সন্তান হওয়া বা বিশেষ কারও মুরিদ হওয়া মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়
এই হাদীস যাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে নিয়ত ও আমল শব্দে ব্যক্ত করেছেন এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, দীনের ভিত্তি হলো আমলের উপর, কোনো ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নয়। হোক ভালত্ব দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা দীনি দৃষ্টিকোণ থেকে। বর্তমানে বহুলোক এই আত্মপ্রতারণার শিকার যে, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের মুরীদ, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের সন্তান ও বংশধর, তাই আমাদের মুক্তি অনিবার্য। আমাদের নেককাজ করার কোনো দরকার নেই। আল্লাহ পাক এ শ্রেণির লোকদের ধ্যানধারণা রদ করে বলেছেন, ওই সকল মানুষ বিগত হয়ে গেছে তাদেরই জন্য তাদের আমল, আর তোমাদেরই জন্য তোমাদের আমল। তারা কী করত এ নিয়ে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে না। তবে হ্যাঁ, বুযুর্গদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সংস্রবের সুবাদে বরকত লাভ হয় যদি সন্তান ও মুরীদের আকীদা ও আমল ভালো হয়। যদি তাদের আমল ভালো না হয় আকীদা বিশ্বাস সঠিক না হয় তাহলে নিছক বরকত দিয়ে কী লাভ হবে।
বরকতের দৃষ্টান্ত
বরকতের দৃষ্টান্ত হলো চাটনি ও মুরব্বার মতো আর আমলের দৃষ্টান্ত খাদ্যের মতো যা দেহের অংশে পরিণত হয়। মুরব্বা ও চাটনি খাদ্য হজমে অবশ্যই সহায়ক হয় কিন্তু তার সঙ্গে খাদ্য তো থাকতে হবে। যদি খাদ্য না থাকে তাহলে খাবার ছাড়া শুধু মুরব্বা ও চাটনিই কি মেহমানের সামনে পেশ করা যাবে? কিছুতেই না। তদ্রুপ নবী কিংবা অলির সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা আমলে অবশ্যই বরকত হয় কিন্তু নেক আমল ছাড়া নিছক বরকত মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তম কন্যাকে লক্ষ করে বলেন, হে ফাতেমা! নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না। এর অর্থ এই নয় যে, নেক আমল থাকা অবস্থায়ও উচ্চ মর্যাদা লাভে সহায়ক হতে পারবে না কিংবা সুপারিশ করতে পারবে না।
এই হাদীস যাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে নিয়ত ও আমল শব্দে ব্যক্ত করেছেন এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, দীনের ভিত্তি হলো আমলের উপর, কোনো ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নয়। হোক ভালত্ব দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা দীনি দৃষ্টিকোণ থেকে। বর্তমানে বহুলোক এই আত্মপ্রতারণার শিকার যে, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের মুরীদ, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের সন্তান ও বংশধর, তাই আমাদের মুক্তি অনিবার্য। আমাদের নেককাজ করার কোনো দরকার নেই। আল্লাহ পাক এ শ্রেণির লোকদের ধ্যানধারণা রদ করে বলেছেন, ওই সকল মানুষ বিগত হয়ে গেছে তাদেরই জন্য তাদের আমল, আর তোমাদেরই জন্য তোমাদের আমল। তারা কী করত এ নিয়ে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে না। তবে হ্যাঁ, বুযুর্গদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সংস্রবের সুবাদে বরকত লাভ হয় যদি সন্তান ও মুরীদের আকীদা ও আমল ভালো হয়। যদি তাদের আমল ভালো না হয় আকীদা বিশ্বাস সঠিক না হয় তাহলে নিছক বরকত দিয়ে কী লাভ হবে।
বরকতের দৃষ্টান্ত
বরকতের দৃষ্টান্ত হলো চাটনি ও মুরব্বার মতো আর আমলের দৃষ্টান্ত খাদ্যের মতো যা দেহের অংশে পরিণত হয়। মুরব্বা ও চাটনি খাদ্য হজমে অবশ্যই সহায়ক হয় কিন্তু তার সঙ্গে খাদ্য তো থাকতে হবে। যদি খাদ্য না থাকে তাহলে খাবার ছাড়া শুধু মুরব্বা ও চাটনিই কি মেহমানের সামনে পেশ করা যাবে? কিছুতেই না। তদ্রুপ নবী কিংবা অলির সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা আমলে অবশ্যই বরকত হয় কিন্তু নেক আমল ছাড়া নিছক বরকত মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তম কন্যাকে লক্ষ করে বলেন, হে ফাতেমা! নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না। এর অর্থ এই নয় যে, নেক আমল থাকা অবস্থায়ও উচ্চ মর্যাদা লাভে সহায়ক হতে পারবে না কিংবা সুপারিশ করতে পারবে না।
নেক আমল থাকলে বুযুর্গদের সন্তান হওয়ার সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়
বুযুর্গদের সঙ্গে বংশগত সম্পর্কের সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হওয়ার কথা স্বয়ং কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করেছে আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের সঙ্গে একত্র করে দেব। আর তাদের সওয়াব থেকে সামান্যতম কমাব না। এর মর্মার্থ হলো—সন্তান-সন্ততির নেক কাজ যদিও ওই পর্যায়ের না হয় যে পর্যায়ের ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের, তবে যদি সন্তান-সন্ততি ও বংশধর ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করে থাকে তাহলে আমি তাদেরকেও পূর্বপুরষদের স্তরে ও মরতবায় পৌঁছে দেব। তো এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়ার সুবাদে তাদেরকেও ওইবুযুর্গদের স্তরে উন্নীত করে দেওয়া হবে। তবে এর কোনো দলিল নেই যে, এ জন্য (বুযুর্গদের স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য) শুধু সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়াই অনিবার্য; বরং এই আয়াতে স্বয়ং ঈমানকে শর্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে (যা দ্বারা বোঝা যায় ঈমানসহ নেক আমলের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ অব্যাহত রাখলে তাদের সন্তান ও বংশধর না হলেও তাদের স্তরে উন্নীত হওয়া যাবে)। আজকাল পীররা নিজেদের দোকান জমজমাট করে রাখা এবং দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে মুরীদদের ধরে রাখার জন্য এই চাল চেলে রেখেছে যে, তোমাদের নেককাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা যা করছি তা-ই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
বুযুর্গদের সঙ্গে বংশগত সম্পর্কের সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হওয়ার কথা স্বয়ং কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করেছে আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের সঙ্গে একত্র করে দেব। আর তাদের সওয়াব থেকে সামান্যতম কমাব না। এর মর্মার্থ হলো—সন্তান-সন্ততির নেক কাজ যদিও ওই পর্যায়ের না হয় যে পর্যায়ের ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের, তবে যদি সন্তান-সন্ততি ও বংশধর ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করে থাকে তাহলে আমি তাদেরকেও পূর্বপুরষদের স্তরে ও মরতবায় পৌঁছে দেব। তো এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়ার সুবাদে তাদেরকেও ওইবুযুর্গদের স্তরে উন্নীত করে দেওয়া হবে। তবে এর কোনো দলিল নেই যে, এ জন্য (বুযুর্গদের স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য) শুধু সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়াই অনিবার্য; বরং এই আয়াতে স্বয়ং ঈমানকে শর্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে (যা দ্বারা বোঝা যায় ঈমানসহ নেক আমলের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ অব্যাহত রাখলে তাদের সন্তান ও বংশধর না হলেও তাদের স্তরে উন্নীত হওয়া যাবে)। আজকাল পীররা নিজেদের দোকান জমজমাট করে রাখা এবং দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে মুরীদদের ধরে রাখার জন্য এই চাল চেলে রেখেছে যে, তোমাদের নেককাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা যা করছি তা-ই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
আফসোস পীর-মুরিদির যে উদ্দেশ্য ছিল তা বর্তমানে একেবারে বদলে ফেলা হয়েছে
আফসোস পীর-মুরিদির উদ্দেশ্য ছিল নফস ও আত্মার সংশোধন, নফসকে কষ্ট করানো, যাতে এককভাবে নেক কাজের তাওফীক না হলে পীরের প্রভাবে কিংবা তার তাগাদায় তৌফিক হয়ে যায়। এতে নফসের সংশোধনের কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু বর্তমানে লোকজন একে (পীর-মুরিদি) মানুষের সামনে বেকার-অথর্বে পরিণত করার মাধ্যম বানিয়ে রেখেছে।
আফসোস পীর-মুরিদির উদ্দেশ্য ছিল নফস ও আত্মার সংশোধন, নফসকে কষ্ট করানো, যাতে এককভাবে নেক কাজের তাওফীক না হলে পীরের প্রভাবে কিংবা তার তাগাদায় তৌফিক হয়ে যায়। এতে নফসের সংশোধনের কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু বর্তমানে লোকজন একে (পীর-মুরিদি) মানুষের সামনে বেকার-অথর্বে পরিণত করার মাধ্যম বানিয়ে রেখেছে।
জনৈক দুনিয়াদার পীরের ঘটনা
এমনই এক পীরের ঘটনা বর্ণিত আছে যে, তিনি ভক্ত মুরিদদের এলাকায় গেলেন, দেখতে তাকে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছিল। ভক্ত ও মুরিদরা প্রশ্ন করল পীরজীকে দুর্বল দেখাচ্ছে যে? উত্তরে তিনি বললেন, হতচ্ছারার দল! আমি তো তোদের কারণেই দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করছি। তোমাদের সমস্ত কাজ আমার একার করতে হয়, তোমরা নামায পড় না তোমাদের নামায আমার আদায় করতে হয়, তোমরা রোযা রাখনা তোমাদের রোযা আমার রাখতে হয়, তদুপরি পুলসিরাতের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় যা চুলের চেয়েও চিকন এবং তরাবারির চেয়েও ধারালো। ভক্ত ও মুরিদরা পীরের এই উক্তিতে যারপরনাই আনন্দিত হয়ে স্বগতোক্তি করে বলল বাহ! বাহ! পীর সাহেবই আমাদের কাজ সেরে দেন। আনন্দের আতিশয্যে জনৈক মুরিদ বলল আমার অমুক ফসলি জমি আপনাকে দিয়ে দিলাম। ক্ষেত পেয়ে পীর খুব খুশি হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, ও তো মৌখিকভাবে ক্ষেত দিয়ে দিয়েছে আমি তো বুঝে পাইনি। আবার না তা কেবল মৌখিক লেনদেনে পর্যবসিত হয়, তাই এখনই দখল বুঝে নেওয়া উচিত। ক্ষেত দেখে চিহ্নিত করে নেওয়া দরকার। এ ভাবনা থেকে পীর সাহেব বলল, চৌধুরী সাহেব ক্ষেত দেখিয়ে দাও। কথামতো মুরিদ পীর সাহেবকে সঙ্গে করে ক্ষেত দেখতে নিয়ে চলল। পথ ছিল ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু আইলের। ধান ক্ষেতে পানি ছিল বেশি। ছিল ব্যাঙের উৎপাত। মুরিদ পীরকে এগিয়ে দিল, ক্ষেতের আইল একেতো ছিল সরু তদুপরি পানিতে পিচ্ছিল। তাই পীর সাহেব এক জায়গায় পিছলে পড়ল। মুরিদ পেছন থেকে পীরকে সজোরে লাথি মেরে মন্তব্য করল-আরে! তুই এত মোটা আইলের উপরই চলতে পারিস না, চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়ে ধারালো পুলসিরাতের উপর আবার কী করে চলবি! যা আমি তোকে ক্ষেতই দেব না। মোটকথা বর্তমানের পীররা সাধারণ মানুষের মাথায় এ কথা ভালোভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, যা ইচ্ছে তাই করো সবই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। উক্ত হাদীসের আলোকে এ ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার রদ হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টি দীনের উপর কথাটি এভাবে ব্যক্ত করার পরিবর্তে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, যার দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেছে মুক্তি ও নাজাতের ভিত্তি হলো নেক আমলের উপর। নিয়ত আমলের মধ্যে দাখেল থাকা সত্ত্বেও তা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো যাতে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, স্বয়ং আমলই তখন গ্রহণযোগ্য হয় যখন নিয়ত সঠিক ও বিশুদ্ধ হয়। দ্বিতীয়ত এ কারণেও নিয়ত স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দু’শব্দ দ্বারা দু’দলের সংশোধন উদ্দেশ্য, আমল শব্দটি বেশিরভাগ জনসাধারণের সংশোধনের জন্য, কেননা তারা রাত-দিন দুনিয়ার ধান্ধায় লেগে থাকার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নেক কাজের প্রতি মনোযোগ কম থাকে। তবে তারা অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত তাই তারা খারাপ নিয়ত অর্থাৎ রিয়া-লৌকিকতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত, কারণ তাদেরকে কেউ বুযুর্গ মনে করে না। তাই তাদের মনে এ ধরনের ইচ্ছা থাকে না। আর নিয়ত শব্দের মাধ্যমে অধিকাংশ বিশিষ্টজনদের সংশোধন করেছেন,
এমনই এক পীরের ঘটনা বর্ণিত আছে যে, তিনি ভক্ত মুরিদদের এলাকায় গেলেন, দেখতে তাকে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছিল। ভক্ত ও মুরিদরা প্রশ্ন করল পীরজীকে দুর্বল দেখাচ্ছে যে? উত্তরে তিনি বললেন, হতচ্ছারার দল! আমি তো তোদের কারণেই দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করছি। তোমাদের সমস্ত কাজ আমার একার করতে হয়, তোমরা নামায পড় না তোমাদের নামায আমার আদায় করতে হয়, তোমরা রোযা রাখনা তোমাদের রোযা আমার রাখতে হয়, তদুপরি পুলসিরাতের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় যা চুলের চেয়েও চিকন এবং তরাবারির চেয়েও ধারালো। ভক্ত ও মুরিদরা পীরের এই উক্তিতে যারপরনাই আনন্দিত হয়ে স্বগতোক্তি করে বলল বাহ! বাহ! পীর সাহেবই আমাদের কাজ সেরে দেন। আনন্দের আতিশয্যে জনৈক মুরিদ বলল আমার অমুক ফসলি জমি আপনাকে দিয়ে দিলাম। ক্ষেত পেয়ে পীর খুব খুশি হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, ও তো মৌখিকভাবে ক্ষেত দিয়ে দিয়েছে আমি তো বুঝে পাইনি। আবার না তা কেবল মৌখিক লেনদেনে পর্যবসিত হয়, তাই এখনই দখল বুঝে নেওয়া উচিত। ক্ষেত দেখে চিহ্নিত করে নেওয়া দরকার। এ ভাবনা থেকে পীর সাহেব বলল, চৌধুরী সাহেব ক্ষেত দেখিয়ে দাও। কথামতো মুরিদ পীর সাহেবকে সঙ্গে করে ক্ষেত দেখতে নিয়ে চলল। পথ ছিল ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু আইলের। ধান ক্ষেতে পানি ছিল বেশি। ছিল ব্যাঙের উৎপাত। মুরিদ পীরকে এগিয়ে দিল, ক্ষেতের আইল একেতো ছিল সরু তদুপরি পানিতে পিচ্ছিল। তাই পীর সাহেব এক জায়গায় পিছলে পড়ল। মুরিদ পেছন থেকে পীরকে সজোরে লাথি মেরে মন্তব্য করল-আরে! তুই এত মোটা আইলের উপরই চলতে পারিস না, চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়ে ধারালো পুলসিরাতের উপর আবার কী করে চলবি! যা আমি তোকে ক্ষেতই দেব না। মোটকথা বর্তমানের পীররা সাধারণ মানুষের মাথায় এ কথা ভালোভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, যা ইচ্ছে তাই করো সবই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। উক্ত হাদীসের আলোকে এ ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার রদ হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টি দীনের উপর কথাটি এভাবে ব্যক্ত করার পরিবর্তে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, যার দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেছে মুক্তি ও নাজাতের ভিত্তি হলো নেক আমলের উপর। নিয়ত আমলের মধ্যে দাখেল থাকা সত্ত্বেও তা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো যাতে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, স্বয়ং আমলই তখন গ্রহণযোগ্য হয় যখন নিয়ত সঠিক ও বিশুদ্ধ হয়। দ্বিতীয়ত এ কারণেও নিয়ত স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দু’শব্দ দ্বারা দু’দলের সংশোধন উদ্দেশ্য, আমল শব্দটি বেশিরভাগ জনসাধারণের সংশোধনের জন্য, কেননা তারা রাত-দিন দুনিয়ার ধান্ধায় লেগে থাকার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নেক কাজের প্রতি মনোযোগ কম থাকে। তবে তারা অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত তাই তারা খারাপ নিয়ত অর্থাৎ রিয়া-লৌকিকতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত, কারণ তাদেরকে কেউ বুযুর্গ মনে করে না। তাই তাদের মনে এ ধরনের ইচ্ছা থাকে না। আর নিয়ত শব্দের মাধ্যমে অধিকাংশ বিশিষ্টজনদের সংশোধন করেছেন,
যাদের দীনদার মনে করা হয়, যারা সর্বপ্রকার ফরজ ও ওয়াজিব বিধানের
প্রতি যত্নবান, কিন্তু ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা থেকে রিক্তহস্ত। তারা
লোক-দেখানোর জন্য আমল করে তাই তাদের এই দীনদারী বাহ্যিক দীনদারী। খাঁটি ও
প্রকৃত দীনদারী তাদের মধ্যে নেই। এ ধরনের লোকদের মধ্যে লৌকিকতা ও
লোকদেখানোর ব্যাধি থাকে। তো নিয়ত শব্দের মাধ্যমে ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতার
প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তো এর মর্মার্থ হলো-নামায, রোযা,
হজ, যাকাত ও আল্লাহ আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তা যদিও ফায়দা শূন্য নয় তবেব
যে এসবের কিছুই করে না তার তুলনায় হাজার গুণ ভালো। কিন্তু যা মূল উদ্দেশ্য
অর্থ্যাৎ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি, তা তখনই লাভ হবে যখন আমলে
ইখলাস থাকবে অর্থাৎ খালেস আল্লাহর জন্য সবকাজ হবে। কৃত্রিমতা ও লৌকিকতার
লেশমাত্র তাতে না থাকবে।
আমলত্যাগী ও ইখলাসবিহীন আমলকারীর দৃষ্টান্তআর ওই দুই ব্যক্তি যাদের একজন নেককাজ করে কিন্তু আমল ইখলাস শূন্য আর অপর ব্যক্তি যে মোটেই আমল করে না, এ দু’জনের দৃষ্টান্ত হলো-দু’জন ব্যক্তি কোনো রাজদরবারে গেল। একজন উপহারসামগ্রী নিয়ে গেল যদিও ঐ উপহারসামগ্রী রাজদরবারের উপযোগী নয় আর অপর ব্যক্তি যে কোনো উপহারসামগ্রী সঙ্গে নেওয়া ছাড়াই রাজদরবারে গিয়ে হাজির হল- তো উপহারসাগ্রী নিয়ে হাজির হওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে তো এ অভিযোগ করা হবে না যে, কেন কোনো উপহারসামগ্রী নিয়ে এলে না? যেমন অপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থিত হবে যে, কেন কোনো উপহারসামগ্রী নিয়ে এলে না? তো এই দৃষ্টিকোণ থেকে এটুকুই বড় গনিমত। তবে প্রথমোক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে এ অভিযোগ অবশ্যই হবে যে, তোমার উপহারসামগ্রী আমার শান উপযোগী নয়। আর হাদিয়া, উপহার, উপঢৌকনের উদ্দেশ্য হলো সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি, তা-ই যখন লাভ হলো না, তখন উপহার দেওয়া না-দেওয়া সমান। তদ্রুপ এবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা। সুতরাং যে এবাদতে নিয়ত বিশুদ্ধ নয় সে এবাদত হওয়া না-হওয়া বরাবর।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)