গরু-ছাগল জবাই করা সহানুভূতি ও সহমর্মিতা
পরিপন্থী নয়। কেননা তা আল্লাহ পাকের আদেশ পালন। যিনি সবকিছুর মালিক তিনি
আমাদের জন্য তা হালাল করেছেন। তাই এ ধরনের সহমর্মিতা আমরা প্রদর্শন করতে
পারব না। আমরা যদি এ ধরনের হামদর্দি দেখাই, তাহলে আমাদেরকে আল্লাহ পাকের
বিরাগভাজন হতে হবে। কেননা, গরু-মহিষ-বকরি আল্লাহ পাকের নির্দেশের সামনে
কিছুই না। যদি আমরা এসবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে এগুলোকে জবাই করা
থেকে বিরত থাকি, তাহলে আল্লাহ পাকের হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ হবে। এ প্রসঙ্গে
বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা মনে পড়ল।
সুলতান মাহমুদ ও তার ভৃত্য আয়াযের ঘটনা
এ প্রসঙ্গে মাওলানা রুমী রহ. বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বাদশাহ একবার তার পরম বিশ্বস্ত ভৃত্যের পরীক্ষার আয়োজন করলেন। একটি বড় দুর্লভ বহুমূল্য মোতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, একে ভেঙে ফেলো, প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিবেদন করল, এমন বহুমূল্য দুর্লভ মোতি আবার কোত্থেকে পাবেন? এভাবে একে একে অন্য সব আমীর-উমারা এবং মন্ত্রী ও সভাসদদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কারওই ভাঙার সাহস হলো না, সবশেষে আয়াযের পালা এলে আয়াযকে লক্ষ করে নির্দেশ দিলেন, এই মোতি ভেঙে ফেলো। আয়ায তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলল। ভেঙে ফেলতেই সুলতান ক্ষুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এ কী কাণ্ড করলে! উত্তরে আয়ায বলল, জাহাপনা ভুল হয়ে গেছে, মার্জনা করুন। সভাসদ ও মন্ত্রীবর্গ আয়াযকে ধিক্কার দিতে লাগল, নির্বোধ! তুমি মহামান্য বাদশাহর এমন দুর্লভ মোতি ভেঙে ফেললে! প্রতি উত্তরে আয়ায বলল, নির্বোধের দল! তোমরা তো শাহী ফরমানই ভেঙে ফেলেছ আর আমি তো শুধু সামান্য একটি মোতিই ভেঙেছি, শাহী ফরমানের সামনে যার কোনো মূল্যই নেই। সুধীমণ্ডলি! আমাদের তো এই হিম্মত ও সাহস নেই যে, আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা গরু জবাই করো আর আমরা বলব, গরু জবাই করো না। দ্বিতীয়ত দয়া দেখিয়ে গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়ার সরল অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা আল্লাহ পাকের চেয়ে বেশি দয়াবান অথচ মহান আল্লাহ পাকের দয়া ও মেহেরবানীর সঙ্গে আমদের দয়া-মায়ার কোনো তুলনাই চলে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন—
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَۃَ جَلْدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَۃٌ فِیْ دِیْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত করো, তোমরা যদি আল্লাহ পাক এবং পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক তাহলে তার বিধান বাস্তবায়নে যেন দয়া-মায়া কোনো অন্তরায় না হয়। -সূরা নূর : ২
সুতরাং আমাদের হুকুমের গোলাম হওয়া উচিত। যেখানে যে হুকুম হবে সেখানে তা-ই বিনা বাক্যব্যয়ে পালন করতে হবে। এই ছিল প্রকৃত হামদর্দি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বিবরণ। জোরগলায় জনদরদের দাবিদারদের যার হাওয়া-বাতাস পর্যন্তও লাগেনি, যারা সর্বদা সাজ-গোছ ও বেশভূষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা অভাবী মানুষদের জীর্ণদশার কারণে হীন ও তুচ্ছ মনে করে থাকে। এই পর্যন্ত আলোচনা ছিল বাহ্যিক আকার ও সূরত-সংশ্লিষ্ট।
এখন আসা যাক সম্পদের আলোচনা প্রসঙ্গে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সম্পদকেই নিজের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে। অথচ চিন্তা করা উচিত ছিল, সম্পদ কী পরিমাণ কারুনের কাছে ছিল, পক্ষান্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোনো সম্পদই ছিল না। সম্পদ থাকা যদি মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের বিষয় হতো তাহলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচে বেশি অর্থ-সম্পদ থাকত। আর কারুন হতো সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত ও নির্ধন। কিন্তু বর্তমানে অর্থ-সম্পদকেই যোগ্যতা, মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক মনে করা হয় তাই এর জন্য দীনকে বরবাদ করে দেওয়া হয়। বর্তমান যুগের মানসিকতা হলো, যেভাবে পার যে পথে পার অর্থ-সম্পদ উপার্জন করো। হোক তা বৈধ পথে কিংবা অবৈধ পথে। কারও প্রতি জুলুম করে হোক কিংবা দয়া করে। শিক্ষা-দীক্ষায় পাণ্ডিত্যের দাবিদার জনৈক ব্যক্তি সুদী কারবার করত। কেউ এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে উত্তর দেয়, মিয়াঁ! চুপ থাকো, হালাল-হারাম আবার কী জিনিস, এটা এমন এক যুগ যেখানে মুসলমানদের উচিত হলো যে পথেই তার হাতে অর্থ-সম্পদ আসুক তা যেন হাতছাড়া না করে। একে এবং এই শ্রেণির লোকদের আমি লক্ষ করে বলি, তোমাদের দাবি হলো, অর্থ-সম্পদ যেভাবেই হাতে আসে তা লুফে নাও তাহলে চুরি-ডাকাতির মাধ্যমেও তো অর্থ-সম্পদ হাতে আসে, এ কর্মটিও শুরু করে দাও। শরীয়তের বিধান যখন ত্যাগ করতে পেরেছ তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনও বর্জন কর তারপরে দেখো কী হয়। হায় আফসোস! জাগতিক মন্দ কর্ম থেকে তো জেলের ভয়ে বিরত থাকছি পক্ষান্তরে বিশ্বজগতের স্রষ্টার বিধান লঙ্ঘনের মতো চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছি।
কতিপয় লোকের বাহানা হলো, আমরা দীনের স্বার্থে জাগতিক উন্নতির চেষ্টা করি। জাগতিক উন্œতি ছাড়া দীনদারীও সুন্দর হয়না। কিন্তু এই বাণী তখন যথার্থ বলে বিবেচিত হতো যখন জাগতিক উন্নতির পাশাপাশি দীনদারীর উন্নতি সাধিত হতো। আমরা তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট দেখতে পাই জাগতিক উন্নতি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, দীনদারীতে সে পরিমাণ অবনতি হতে থাকে। সুধীমণ্ডলী! এ ধরনের জাগতিক উন্নতি কোনো কাজে লাগবে না। আখেরাতে কাজে না আসার বিষয়টি তো একেবারে পরিষ্কার। আমরা তো এর কাজে না আসা এবং পার্থিব উন্নতি দুনিয়াতেই চরম অনুতাপের কারণ হওয়াটা স্বচক্ষে দেখছি। কোনো দুনিয়াদার যখন মরতে লাগে তখন তাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, দুনিয়া উপার্জন ও জাগতিক উন্নতি সাধনের ব্যাপারে এ মুহূর্তে তোমার মতামত কী? এখনো কি তুমি তোমার পূর্ববর্তী মত ও ধ্যানধারণার ওপর স্থির আছ, না তাতে পরিবর্তন এসেছে? আমি কসম করে বলছি, তার পূর্বেকার মত ও দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পাল্টে যাবে। কেননা, এখন সে যে বাজারে গমন করছে সেখানে এ মুদ্রা অচল যার সঞ্চয়ের পেছনে সে সারা জীবন অপচয় করেছে, আর ওখানে যে মুদ্রা চলে তার ঝুলি তা থেকে একেবারে রিক্ত ও শূন্য। কারণ এতদিন সে ওই মুদ্রা সঞ্চয়কে অর্থহীন আখ্যায়িত করত। আর ওখানে ওই মুদ্রাই চলে যা বাহ্যত তোমাদের নিকট জাল মনে হয় অথচ বাস্তবে তা খাঁটি মুদ্রা। আর এখানকার মুদ্রা বাহ্যত রুপা মনে হলেও বাস্তবে তা লোহা। এখন চক্ষু মুদিত কিন্তু অতিসত্বর চক্ষু খুলে যাবে এবং হাকীকত ও প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিগোচর হবে। এখন যা ঘটছে সব ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মতো ঘটছে, যখন চক্ষু উন্মোচিত হয়ে যাবে তখন বুঝে আসবে আমরা আপাদমস্তক লোকসানে ডুবে ছিলাম।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা রুমী রহ. বড় শিক্ষণীয় একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। বাদশাহ একবার তার পরম বিশ্বস্ত ভৃত্যের পরীক্ষার আয়োজন করলেন। একটি বড় দুর্লভ বহুমূল্য মোতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, একে ভেঙে ফেলো, প্রতি উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নিবেদন করল, এমন বহুমূল্য দুর্লভ মোতি আবার কোত্থেকে পাবেন? এভাবে একে একে অন্য সব আমীর-উমারা এবং মন্ত্রী ও সভাসদদের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কারওই ভাঙার সাহস হলো না, সবশেষে আয়াযের পালা এলে আয়াযকে লক্ষ করে নির্দেশ দিলেন, এই মোতি ভেঙে ফেলো। আয়ায তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে ফেলল। ভেঙে ফেলতেই সুলতান ক্ষুব্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এ কী কাণ্ড করলে! উত্তরে আয়ায বলল, জাহাপনা ভুল হয়ে গেছে, মার্জনা করুন। সভাসদ ও মন্ত্রীবর্গ আয়াযকে ধিক্কার দিতে লাগল, নির্বোধ! তুমি মহামান্য বাদশাহর এমন দুর্লভ মোতি ভেঙে ফেললে! প্রতি উত্তরে আয়ায বলল, নির্বোধের দল! তোমরা তো শাহী ফরমানই ভেঙে ফেলেছ আর আমি তো শুধু সামান্য একটি মোতিই ভেঙেছি, শাহী ফরমানের সামনে যার কোনো মূল্যই নেই। সুধীমণ্ডলি! আমাদের তো এই হিম্মত ও সাহস নেই যে, আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা গরু জবাই করো আর আমরা বলব, গরু জবাই করো না। দ্বিতীয়ত দয়া দেখিয়ে গরু জবাই করা ছেড়ে দেওয়ার সরল অর্থ এই দাঁড়াবে যে, আমরা আল্লাহ পাকের চেয়ে বেশি দয়াবান অথচ মহান আল্লাহ পাকের দয়া ও মেহেরবানীর সঙ্গে আমদের দয়া-মায়ার কোনো তুলনাই চলে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন—
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیْ فَاجْلِدُوْا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَۃَ جَلْدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاْخُذْكُمْ بِهِمَا رَاْفَۃٌ فِیْ دِیْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ
ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত করো, তোমরা যদি আল্লাহ পাক এবং পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক তাহলে তার বিধান বাস্তবায়নে যেন দয়া-মায়া কোনো অন্তরায় না হয়। -সূরা নূর : ২
সুতরাং আমাদের হুকুমের গোলাম হওয়া উচিত। যেখানে যে হুকুম হবে সেখানে তা-ই বিনা বাক্যব্যয়ে পালন করতে হবে। এই ছিল প্রকৃত হামদর্দি, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির বিবরণ। জোরগলায় জনদরদের দাবিদারদের যার হাওয়া-বাতাস পর্যন্তও লাগেনি, যারা সর্বদা সাজ-গোছ ও বেশভূষার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা অভাবী মানুষদের জীর্ণদশার কারণে হীন ও তুচ্ছ মনে করে থাকে। এই পর্যন্ত আলোচনা ছিল বাহ্যিক আকার ও সূরত-সংশ্লিষ্ট।
এখন আসা যাক সম্পদের আলোচনা প্রসঙ্গে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ সম্পদকেই নিজের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে। অথচ চিন্তা করা উচিত ছিল, সম্পদ কী পরিমাণ কারুনের কাছে ছিল, পক্ষান্তরে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোনো সম্পদই ছিল না। সম্পদ থাকা যদি মান-মর্যাদা ও আভিজাত্যের বিষয় হতো তাহলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচে বেশি অর্থ-সম্পদ থাকত। আর কারুন হতো সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত ও নির্ধন। কিন্তু বর্তমানে অর্থ-সম্পদকেই যোগ্যতা, মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক মনে করা হয় তাই এর জন্য দীনকে বরবাদ করে দেওয়া হয়। বর্তমান যুগের মানসিকতা হলো, যেভাবে পার যে পথে পার অর্থ-সম্পদ উপার্জন করো। হোক তা বৈধ পথে কিংবা অবৈধ পথে। কারও প্রতি জুলুম করে হোক কিংবা দয়া করে। শিক্ষা-দীক্ষায় পাণ্ডিত্যের দাবিদার জনৈক ব্যক্তি সুদী কারবার করত। কেউ এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে উত্তর দেয়, মিয়াঁ! চুপ থাকো, হালাল-হারাম আবার কী জিনিস, এটা এমন এক যুগ যেখানে মুসলমানদের উচিত হলো যে পথেই তার হাতে অর্থ-সম্পদ আসুক তা যেন হাতছাড়া না করে। একে এবং এই শ্রেণির লোকদের আমি লক্ষ করে বলি, তোমাদের দাবি হলো, অর্থ-সম্পদ যেভাবেই হাতে আসে তা লুফে নাও তাহলে চুরি-ডাকাতির মাধ্যমেও তো অর্থ-সম্পদ হাতে আসে, এ কর্মটিও শুরু করে দাও। শরীয়তের বিধান যখন ত্যাগ করতে পেরেছ তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনও বর্জন কর তারপরে দেখো কী হয়। হায় আফসোস! জাগতিক মন্দ কর্ম থেকে তো জেলের ভয়ে বিরত থাকছি পক্ষান্তরে বিশ্বজগতের স্রষ্টার বিধান লঙ্ঘনের মতো চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছি।
কতিপয় লোকের বাহানা হলো, আমরা দীনের স্বার্থে জাগতিক উন্নতির চেষ্টা করি। জাগতিক উন্œতি ছাড়া দীনদারীও সুন্দর হয়না। কিন্তু এই বাণী তখন যথার্থ বলে বিবেচিত হতো যখন জাগতিক উন্নতির পাশাপাশি দীনদারীর উন্নতি সাধিত হতো। আমরা তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট দেখতে পাই জাগতিক উন্নতি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, দীনদারীতে সে পরিমাণ অবনতি হতে থাকে। সুধীমণ্ডলী! এ ধরনের জাগতিক উন্নতি কোনো কাজে লাগবে না। আখেরাতে কাজে না আসার বিষয়টি তো একেবারে পরিষ্কার। আমরা তো এর কাজে না আসা এবং পার্থিব উন্নতি দুনিয়াতেই চরম অনুতাপের কারণ হওয়াটা স্বচক্ষে দেখছি। কোনো দুনিয়াদার যখন মরতে লাগে তখন তাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, দুনিয়া উপার্জন ও জাগতিক উন্নতি সাধনের ব্যাপারে এ মুহূর্তে তোমার মতামত কী? এখনো কি তুমি তোমার পূর্ববর্তী মত ও ধ্যানধারণার ওপর স্থির আছ, না তাতে পরিবর্তন এসেছে? আমি কসম করে বলছি, তার পূর্বেকার মত ও দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পাল্টে যাবে। কেননা, এখন সে যে বাজারে গমন করছে সেখানে এ মুদ্রা অচল যার সঞ্চয়ের পেছনে সে সারা জীবন অপচয় করেছে, আর ওখানে যে মুদ্রা চলে তার ঝুলি তা থেকে একেবারে রিক্ত ও শূন্য। কারণ এতদিন সে ওই মুদ্রা সঞ্চয়কে অর্থহীন আখ্যায়িত করত। আর ওখানে ওই মুদ্রাই চলে যা বাহ্যত তোমাদের নিকট জাল মনে হয় অথচ বাস্তবে তা খাঁটি মুদ্রা। আর এখানকার মুদ্রা বাহ্যত রুপা মনে হলেও বাস্তবে তা লোহা। এখন চক্ষু মুদিত কিন্তু অতিসত্বর চক্ষু খুলে যাবে এবং হাকীকত ও প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিগোচর হবে। এখন যা ঘটছে সব ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের মতো ঘটছে, যখন চক্ষু উন্মোচিত হয়ে যাবে তখন বুঝে আসবে আমরা আপাদমস্তক লোকসানে ডুবে ছিলাম।
একটি রসাত্মক গল্প
জনৈক ব্যক্তি সর্বদা বিছানায় পেশাব করে দিত, বিরক্ত হয়ে স্ত্রী একদিন বলেই বসল, কী অলুক্ষণে পুরুষ তুমি, প্রতি রাতেই বিছানায় পেশাব করে দাও। স্বামী উত্তর দিল, প্রতি রাতেই স্বপ্নে শয়তানের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে ভ্রমণ করাতে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যখন আমার পেশাবের বেগ হয় তখন আমাকে কোথাও বসিয়ে দিয়ে পেশাবের কাজ সেরে নিতে বলে। তাই আমি পেশাব করে দিই। স্ত্রী বলল, বেশ! শয়তান তো জ্বিন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত আর জিনরা তো বড় বড় কাজ করতে পারে। এদিকে আমাদের কত অনটনের সংসার, তুমি তার কাছে আবদার কোরো, আমি বড় গরীব মানুষ, আমার সংসার বড় অভাবের। আমাকে কোথাও থেকে কিছু টাকা-পয়সা জোগাড় করে দাও। স্বামী বলল, ঠিক আছে। আবার যদি স্বপ্নে সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে অবশ্যই এ আবদার জানাব। প্রতিদিনের মতো ওই রাতেও শয়তান হাজির হলে সে তাকে বলল, শয়তান কোথাকার! আমাকে কেবল পেশাবই করাতে থাকিস, এদিকে অভাব অনটনে আমাদের সংসারের অবস্থা নাজেহাল। কোথাও থেকে আমাদের কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দিতে পারিস না! শয়তান বলল, এ কথা আমাকে আগে কেন বলনি। চলো, তোমাকে বহু অর্থকড়ির ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে তাকে এক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখান থেকে বড় একটি টাকার বস্তা তার মাথায় চাপিয়ে দিল। ওই বোঝার ভার বহন করতে না পেরে বেচারা পায়খানাই করে দিল। এরপরেই চক্ষু খুলে গেল। দেখতে পেল বিছানা পেশাব-পায়খানায় একাকার। টাকার বস্তার নাম-গন্ধও নেই। গল্পটি রসাত্মক হলেও এর থেকে বড় তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফলাফলে উপনীত হওয়া যায়। তা হলো ইহজগতের দৃষ্টান্ত হুবহু স্বপ্নের মতো। জাগতিক উন্নতি সাধনে বিভোর লোকদের দৃষ্টান্ত গল্পে বর্ণিত স্বাপ্নিকের মতো, আর দুনিয়া হলো মলমূত্র। এখন আমরা গাফলত ও উদাসীনতার ঘোরে বিভোর। আমাদের কোনো খবর নেই, আমরা কী সঞ্চয় করছি, মুদিত চক্ষু যখন উন্মোচিত হবে অর্থ্যাৎ মৃত্যু এসে হাজির হবে তখন সম্যক অবগতি লাভ হবে যে, তা ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি তো নয়ই বরং মলমূত্রের ভাগাড়। তখন তারা বলবে, আরে! আমরা তো বড় ধোঁকায় পড়েছিলাম, হিরা-মোতি, পান্না মনে করে যা সঞ্চয় করেছিলাম এখন তো দেখছি এসবই পাথরকুচি ও কঙ্কর!
জনৈক ব্যক্তি সর্বদা বিছানায় পেশাব করে দিত, বিরক্ত হয়ে স্ত্রী একদিন বলেই বসল, কী অলুক্ষণে পুরুষ তুমি, প্রতি রাতেই বিছানায় পেশাব করে দাও। স্বামী উত্তর দিল, প্রতি রাতেই স্বপ্নে শয়তানের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে আমাকে ভ্রমণ করাতে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যখন আমার পেশাবের বেগ হয় তখন আমাকে কোথাও বসিয়ে দিয়ে পেশাবের কাজ সেরে নিতে বলে। তাই আমি পেশাব করে দিই। স্ত্রী বলল, বেশ! শয়তান তো জ্বিন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত আর জিনরা তো বড় বড় কাজ করতে পারে। এদিকে আমাদের কত অনটনের সংসার, তুমি তার কাছে আবদার কোরো, আমি বড় গরীব মানুষ, আমার সংসার বড় অভাবের। আমাকে কোথাও থেকে কিছু টাকা-পয়সা জোগাড় করে দাও। স্বামী বলল, ঠিক আছে। আবার যদি স্বপ্নে সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে অবশ্যই এ আবদার জানাব। প্রতিদিনের মতো ওই রাতেও শয়তান হাজির হলে সে তাকে বলল, শয়তান কোথাকার! আমাকে কেবল পেশাবই করাতে থাকিস, এদিকে অভাব অনটনে আমাদের সংসারের অবস্থা নাজেহাল। কোথাও থেকে আমাদের কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দিতে পারিস না! শয়তান বলল, এ কথা আমাকে আগে কেন বলনি। চলো, তোমাকে বহু অর্থকড়ির ব্যবস্থা করে দেব। এই বলে তাকে এক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখান থেকে বড় একটি টাকার বস্তা তার মাথায় চাপিয়ে দিল। ওই বোঝার ভার বহন করতে না পেরে বেচারা পায়খানাই করে দিল। এরপরেই চক্ষু খুলে গেল। দেখতে পেল বিছানা পেশাব-পায়খানায় একাকার। টাকার বস্তার নাম-গন্ধও নেই। গল্পটি রসাত্মক হলেও এর থেকে বড় তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফলাফলে উপনীত হওয়া যায়। তা হলো ইহজগতের দৃষ্টান্ত হুবহু স্বপ্নের মতো। জাগতিক উন্নতি সাধনে বিভোর লোকদের দৃষ্টান্ত গল্পে বর্ণিত স্বাপ্নিকের মতো, আর দুনিয়া হলো মলমূত্র। এখন আমরা গাফলত ও উদাসীনতার ঘোরে বিভোর। আমাদের কোনো খবর নেই, আমরা কী সঞ্চয় করছি, মুদিত চক্ষু যখন উন্মোচিত হবে অর্থ্যাৎ মৃত্যু এসে হাজির হবে তখন সম্যক অবগতি লাভ হবে যে, তা ধন-সম্পদ ও অর্থকড়ি তো নয়ই বরং মলমূত্রের ভাগাড়। তখন তারা বলবে, আরে! আমরা তো বড় ধোঁকায় পড়েছিলাম, হিরা-মোতি, পান্না মনে করে যা সঞ্চয় করেছিলাম এখন তো দেখছি এসবই পাথরকুচি ও কঙ্কর!
কী ধরনের দুনিয়া ও জাগতিক উন্নতি নিন্দনীয়
কতিপয় মানুষ সংশয় প্রকাশ করে বলে, হুযুররা দুনিয়া বর্জন করতে উৎসাহিত করে অথচ নিজেরাই সম্পদ সঞ্চয় করে। আর আমরা যখন দুনিয়ার দীনতা হীনতা জানতে পারি তখন তা নিজ থেকেই বর্জন করি। আর দুনিয়া এলেও দেদারছে বিলিয়ে দিই। এই সংশয়ের উত্তর হলো, আমরা ওই দুনিয়াকে নিন্দনীয় বলি যার দ্বারা মানুষ গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবে যায়। আর ওই দুনিয়াদারদের নিন্দা করি যারা দুনিয়া নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, পরিণামে দীনকেই বরবাদ করে ফেলে। এমনকি বৈধভাবে যদি পার্থিব সম্পদ প্রয়োজন পরিমাণ হয় কিংবা প্রয়োজন-অতিরিক্ত হয় আর তা ব্যক্তিকে গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবিয়ে না দেয়, তা নিন্দনীয় নয়; বরং প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা একান্ত প্রয়োজনভুক্ত।
মোল্লা জামী রহ. যখন পীরের সন্ধানে খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রহ. এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, খাজা সাহেবের দরবার বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ দেখতে পেলেন। সর্বপ্রকার পার্থিব ঐশ্বর্যে তা সুশোভিত। মোল্লা জামী এই দৃশ্য অবলোকন করে বড় মর্মাহত হলেন, জোশ ও আবেগের উদ্দীপনায় বে-এখতিয়ার তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
এ কথা বলে অনুতাপ-দগ্ধ হৃদয়ে মসজিদে গিয়ে শুয়ে রইলেন। স্বপ্নে দেখলেন কেয়ামত কায়েম হয়ে গেছে। হাশরের ময়দানে সবাই উপস্থিত। আর মোল্লা জামী জনৈক পাওনাদারের দেনা আদায় নিয়ে বড়ই অস্থির ও পেরেশান। অদূরেই খাজা সাহেব বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করছেন। তাকে অস্থির ও পেরেশান দেখে প্রশ্ন করলেন, দরবেশজী! পাওনা পরিশোধ নিয়ে আপনাকে বড়ই অস্থির ও পেরেশান দেখাচ্ছে যে! আমি এখানে যে রত্ন-ভাণ্ডার সঞ্চিত রেখেছি তা থেকে আপনার পাওনা পরিশোধ করে দিন। এরপরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। খাজা সাহেব তখন মসজিদে আসছিলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হয়ে হযরতের পদতলে লুটিয়ে পড়ে নিবেদন করলেন-আমার বে-আদবী মার্জনা করুন। খাজা সাহেব উত্তর দিলেন, স্বপ্ন ও কল্পনা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে, এসবের কী গ্রহণযোগ্যতা আছে! এতে মোল্লা সাহেবের ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। তারপর খাজা সাহেব বললেন, ঐ পঙ্ক্তিটি কী ছিল যা আপনি পড়েছিলেন? তিনি নিবেদন করলেন, হযরত সেটা তো ছিল আমার নির্বুদ্ধিতা। হযরত বললেন, না! আমি তা-ই শুনতে চাই। মোল্লা জামী বললেন, এখানকার ঐশ্বর্য দেখে আমার মুখ দিয়ে বে-এখতিয়ার বেরিয়ে পড়েছিল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
খাজা সাহেব বললেন, বক্তব্য ঠিক আছে তবে তা অসম্পূর্ণ। এর পরে এ চরণটি যোগ করে দিন-
اگر دارد برائے دوست دارد
পার্থিব ঐশ্বর্যের মাঝে থাকলেও প্রিয়তম (আল্লাহ পাকের) জন্যই থাকে। অর্থাৎ পার্থিব ধন-সম্পদ আল্লাহ পাকের জন্যই গচ্ছিত রাখে।
সারকথা হলো-পার্থিব ধনসম্পদ যদি দীনের জন্য হয় তাহলে তা দুনিয়া নয়; বরং তাও দীন। ধন-সম্পদ ও পার্থিব ঐশ্বর্যের দৃষ্টান্ত হলো পানির মতো আর হৃদয়ের দৃষ্টান্ত হলো নৌকার মতো। পানি যদি নৌকার ভেতরে প্রবেশ করে তা নৌকাকে ডুবিয়ে দেয়, নৌকার বাইরে থাকলে তা নৌকা চলাচলে সহায়ক হয়। তদ্রুপ ধন-সম্পদ যদি হৃদয়ের ভেতরে থাকে অর্থাৎ এর মোহ ও আকর্ষণ অন্তরে আসন গেড়ে নেয়, তা ধ্বংসের কারণ হয়। আর যদি অন্তরের বাইরে থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা হয় না। মোটকথা প্রয়োজন-পরিমাণ সম্পদ তো খুবই জরুরি অন্যথায় অস্থির ও পেরেশান থাকতে হয়। আর না হয় এমন অবস্থা হয় যে, একদিকে নামাযের নিয়ত বাঁধে আরেক দিকে অন্তরে এই খেয়াল ঘুরপাক খেতে থাকে যে, সকালে বিবি-বাচ্চারা কী খাবে। তো ধন-সম্পদ উপার্জন নিষিদ্ধ ও দূষণীয় নয়; বরং নিষিদ্ধ ও দূষণীয় হলো ওই সম্পদ যা গাফলত ও উদাসীনতার কারণ হয় এবং যার কারণে গরীবদের হীন ও তুচ্ছ মনে হতে থাকে।
এরপর বলেন-
ولكن ينظر إلى إعمالكم ونياتكم
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের আমল এবং নিয়ত দেখেন। আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, জাহেরী সূরত ও সম্পদের উপর নয়। সুধীমণ্ডলী! এ বিষয়টি যখন প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন আপন আপন নিয়ত ও আমল সুন্দর ও উন্নত করার চেষ্টা করুন।
প্রত্যেক যুগের মানুষ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, এ যুগের রোগ-ব্যাধির অন্যতম একটি ব্যাধি হলো—আমাদের দৃষ্টি ও মনোযোগ পুরোপুরি দুনিয়ামুখী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে সূরত ও আকার এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, আর যে জিনিস মূল ও আসল, যার উপর নাজাত ও মুক্তির ভিত্তি, তার প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ নেই। তা হলো দীন, যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ তো এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত।
কতিপয় মানুষ সংশয় প্রকাশ করে বলে, হুযুররা দুনিয়া বর্জন করতে উৎসাহিত করে অথচ নিজেরাই সম্পদ সঞ্চয় করে। আর আমরা যখন দুনিয়ার দীনতা হীনতা জানতে পারি তখন তা নিজ থেকেই বর্জন করি। আর দুনিয়া এলেও দেদারছে বিলিয়ে দিই। এই সংশয়ের উত্তর হলো, আমরা ওই দুনিয়াকে নিন্দনীয় বলি যার দ্বারা মানুষ গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবে যায়। আর ওই দুনিয়াদারদের নিন্দা করি যারা দুনিয়া নিয়ে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, পরিণামে দীনকেই বরবাদ করে ফেলে। এমনকি বৈধভাবে যদি পার্থিব সম্পদ প্রয়োজন পরিমাণ হয় কিংবা প্রয়োজন-অতিরিক্ত হয় আর তা ব্যক্তিকে গাফলত ও উদাসীনতায় ডুবিয়ে না দেয়, তা নিন্দনীয় নয়; বরং প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা একান্ত প্রয়োজনভুক্ত।
মোল্লা জামী রহ. যখন পীরের সন্ধানে খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রহ. এর নিকট গিয়ে পৌঁছলেন, খাজা সাহেবের দরবার বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ দেখতে পেলেন। সর্বপ্রকার পার্থিব ঐশ্বর্যে তা সুশোভিত। মোল্লা জামী এই দৃশ্য অবলোকন করে বড় মর্মাহত হলেন, জোশ ও আবেগের উদ্দীপনায় বে-এখতিয়ার তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
এ কথা বলে অনুতাপ-দগ্ধ হৃদয়ে মসজিদে গিয়ে শুয়ে রইলেন। স্বপ্নে দেখলেন কেয়ামত কায়েম হয়ে গেছে। হাশরের ময়দানে সবাই উপস্থিত। আর মোল্লা জামী জনৈক পাওনাদারের দেনা আদায় নিয়ে বড়ই অস্থির ও পেরেশান। অদূরেই খাজা সাহেব বড় আড়ম্বর ও জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করছেন। তাকে অস্থির ও পেরেশান দেখে প্রশ্ন করলেন, দরবেশজী! পাওনা পরিশোধ নিয়ে আপনাকে বড়ই অস্থির ও পেরেশান দেখাচ্ছে যে! আমি এখানে যে রত্ন-ভাণ্ডার সঞ্চিত রেখেছি তা থেকে আপনার পাওনা পরিশোধ করে দিন। এরপরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। খাজা সাহেব তখন মসজিদে আসছিলেন, তিনি তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হয়ে হযরতের পদতলে লুটিয়ে পড়ে নিবেদন করলেন-আমার বে-আদবী মার্জনা করুন। খাজা সাহেব উত্তর দিলেন, স্বপ্ন ও কল্পনা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে, এসবের কী গ্রহণযোগ্যতা আছে! এতে মোল্লা সাহেবের ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। তারপর খাজা সাহেব বললেন, ঐ পঙ্ক্তিটি কী ছিল যা আপনি পড়েছিলেন? তিনি নিবেদন করলেন, হযরত সেটা তো ছিল আমার নির্বুদ্ধিতা। হযরত বললেন, না! আমি তা-ই শুনতে চাই। মোল্লা জামী বললেন, এখানকার ঐশ্বর্য দেখে আমার মুখ দিয়ে বে-এখতিয়ার বেরিয়ে পড়েছিল-
نہ مردست آں کہ دنیا دوست دارد
অর্থাৎ পার্থিব ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা ব্যক্তি সাধুপুরুষ হতে পারে না।
খাজা সাহেব বললেন, বক্তব্য ঠিক আছে তবে তা অসম্পূর্ণ। এর পরে এ চরণটি যোগ করে দিন-
اگر دارد برائے دوست دارد
পার্থিব ঐশ্বর্যের মাঝে থাকলেও প্রিয়তম (আল্লাহ পাকের) জন্যই থাকে। অর্থাৎ পার্থিব ধন-সম্পদ আল্লাহ পাকের জন্যই গচ্ছিত রাখে।
সারকথা হলো-পার্থিব ধনসম্পদ যদি দীনের জন্য হয় তাহলে তা দুনিয়া নয়; বরং তাও দীন। ধন-সম্পদ ও পার্থিব ঐশ্বর্যের দৃষ্টান্ত হলো পানির মতো আর হৃদয়ের দৃষ্টান্ত হলো নৌকার মতো। পানি যদি নৌকার ভেতরে প্রবেশ করে তা নৌকাকে ডুবিয়ে দেয়, নৌকার বাইরে থাকলে তা নৌকা চলাচলে সহায়ক হয়। তদ্রুপ ধন-সম্পদ যদি হৃদয়ের ভেতরে থাকে অর্থাৎ এর মোহ ও আকর্ষণ অন্তরে আসন গেড়ে নেয়, তা ধ্বংসের কারণ হয়। আর যদি অন্তরের বাইরে থাকে তাহলে কোনো অসুবিধা হয় না। মোটকথা প্রয়োজন-পরিমাণ সম্পদ তো খুবই জরুরি অন্যথায় অস্থির ও পেরেশান থাকতে হয়। আর না হয় এমন অবস্থা হয় যে, একদিকে নামাযের নিয়ত বাঁধে আরেক দিকে অন্তরে এই খেয়াল ঘুরপাক খেতে থাকে যে, সকালে বিবি-বাচ্চারা কী খাবে। তো ধন-সম্পদ উপার্জন নিষিদ্ধ ও দূষণীয় নয়; বরং নিষিদ্ধ ও দূষণীয় হলো ওই সম্পদ যা গাফলত ও উদাসীনতার কারণ হয় এবং যার কারণে গরীবদের হীন ও তুচ্ছ মনে হতে থাকে।
এরপর বলেন-
ولكن ينظر إلى إعمالكم ونياتكم
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের আমল এবং নিয়ত দেখেন। আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, জাহেরী সূরত ও সম্পদের উপর নয়। সুধীমণ্ডলী! এ বিষয়টি যখন প্রমাণিত হয়ে গেল, তখন আপন আপন নিয়ত ও আমল সুন্দর ও উন্নত করার চেষ্টা করুন।
প্রত্যেক যুগের মানুষ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, এ যুগের রোগ-ব্যাধির অন্যতম একটি ব্যাধি হলো—আমাদের দৃষ্টি ও মনোযোগ পুরোপুরি দুনিয়ামুখী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে সূরত ও আকার এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন, আর যে জিনিস মূল ও আসল, যার উপর নাজাত ও মুক্তির ভিত্তি, তার প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র ভ্রæক্ষেপ নেই। তা হলো দীন, যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষ তো এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত।
বর্তমানে দীনদারদের দৃষ্টিও সূরতের উপর
আমরা দেখতে পাই যারা নিজেকে দীনদার দাবি করে তাদের মধ্যেও এ রোগ বিদ্যমান। তাদের কাছে দুনিয়াদারদের সম্মান ও মর্যাদা যতটা দীনদারদের মর্যাদা ততটা নয়। উদাহরণত, তাদের নিকট যদি বিত্তবৈভবের অধিকারী কোনো দুনিয়াদারের আগমন ঘটে পাশাপাশি এমন কোনো দীনদার ব্যক্তি আগমন করে, যার না বিত্তবৈভব আছে, না তার পীর-বুযুর্গ হওয়ার স্বীকৃতি আছে, না কোনো বিশেষ যোগ্যতা আছে, হুযুর বলা হয় অথচ প্রয়োজন-পরিমাণ ইলম প্রথাগত লেখা-পড়া ছাড়াই অর্জন করেছে যেমন অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন। উক্ত ব্যক্তি পরহেজগার ও নেককার এবং তার জাহেরী অবস্থা হলো তার চেহারা-সূরত, আকার-আকৃতি আকর্ষণীয় নয়। লেবাস-পোশাকও জীর্ণ-শীর্ণ, গোষ্ঠী ও বংশেও ততটা অভিজাত নয়; বরং বংশেও তাকে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। মোটকথা, বাহ্যিক ঠাঁটবাট কিছুই নেই। পক্ষান্তরে আরেক ব্যক্তি দুনিয়াদার বিত্তবৈভবের অধিকারী, দীনের চিহ্নমাত্র তার মধ্যে নেই। না নেককার পরহেজগার, আর না শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে বংশে ততটা অগ্রগামী, এমন দুব্যক্তি আগে-পরে-নিজেকে দীনদার দাবি করে-এমন কোনো ব্যক্তির নিকট যায় তাহলে আমি কসম করে বলতে পারি অন্যের কথা কী বলব স্বয়ং নিজের কথাই বলছি ওই দুনিয়াদারের যা ইজ্জত সম্মান আমার চোখে হবে তা উল্লিখিত দীনদারের হবে না। বড় নির্মম সত্য হলো-ব্যাপকভাবে সাধারণত আমাদের স্বভাব-প্রকৃতি দুনিয়ার মোহে আবিষ্ট। বাহ্যিক সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পদই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়।
আমরা দেখতে পাই যারা নিজেকে দীনদার দাবি করে তাদের মধ্যেও এ রোগ বিদ্যমান। তাদের কাছে দুনিয়াদারদের সম্মান ও মর্যাদা যতটা দীনদারদের মর্যাদা ততটা নয়। উদাহরণত, তাদের নিকট যদি বিত্তবৈভবের অধিকারী কোনো দুনিয়াদারের আগমন ঘটে পাশাপাশি এমন কোনো দীনদার ব্যক্তি আগমন করে, যার না বিত্তবৈভব আছে, না তার পীর-বুযুর্গ হওয়ার স্বীকৃতি আছে, না কোনো বিশেষ যোগ্যতা আছে, হুযুর বলা হয় অথচ প্রয়োজন-পরিমাণ ইলম প্রথাগত লেখা-পড়া ছাড়াই অর্জন করেছে যেমন অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম অর্জন করেছেন। উক্ত ব্যক্তি পরহেজগার ও নেককার এবং তার জাহেরী অবস্থা হলো তার চেহারা-সূরত, আকার-আকৃতি আকর্ষণীয় নয়। লেবাস-পোশাকও জীর্ণ-শীর্ণ, গোষ্ঠী ও বংশেও ততটা অভিজাত নয়; বরং বংশেও তাকে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। মোটকথা, বাহ্যিক ঠাঁটবাট কিছুই নেই। পক্ষান্তরে আরেক ব্যক্তি দুনিয়াদার বিত্তবৈভবের অধিকারী, দীনের চিহ্নমাত্র তার মধ্যে নেই। না নেককার পরহেজগার, আর না শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-গুণে বংশে ততটা অগ্রগামী, এমন দুব্যক্তি আগে-পরে-নিজেকে দীনদার দাবি করে-এমন কোনো ব্যক্তির নিকট যায় তাহলে আমি কসম করে বলতে পারি অন্যের কথা কী বলব স্বয়ং নিজের কথাই বলছি ওই দুনিয়াদারের যা ইজ্জত সম্মান আমার চোখে হবে তা উল্লিখিত দীনদারের হবে না। বড় নির্মম সত্য হলো-ব্যাপকভাবে সাধারণত আমাদের স্বভাব-প্রকৃতি দুনিয়ার মোহে আবিষ্ট। বাহ্যিক সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পদই মুখ্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়।
বুযুর্গদের ভক্তি এবং নফসের চালাকি
মানুষ বুযুর্গদের ভক্তি ও সম্মান তখনই প্রদর্শন করে যখন তার জাহেরী ইজ্জত সম্মান থাকে। যদিও সে ইজ্জত সম্মান দীনের কারণেই হোক। তাই তো বুযুর্গদের মধ্য থেকে ওই বুযুর্গকেই ইজ্জত সম্মান করা হয় যাকে দু’চারজন সম্মান করে। কারণ, তাকে সম্মান করতে এবং তার খেদমতে নিজেকে ছোট করতে লজ্জাবোধ হয় না। এটা নফসের বড় গভীর ও সূ² কূটকৌশল। বাহ্যত তো এই সম্মান ও খেদমতে বড় সৌভাগ্য ও দীনদারী মনে হয়, কিন্তু এতে নফসের কুটিল চাল হলো—সে ওই বুযুর্গকে এ কারণে সম্মান করে যে, এতে লোকদের মাঝে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একারণেই নফস এই সম্মান ও খেদমত দ্বারা খুশি হয়, কোনো প্রকার দ্বিধা ও লজ্জা অনুভব করে না। তাই তো যদি দু’জন ব্যক্তি উস্তাদ হন, একজন প্রসিদ্ধ আর একজন অপ্রসিদ্ধ তাহলে আমরা নিজেদের প্রসিদ্ধ উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিই। অখ্যাত উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়।
মানুষ বুযুর্গদের ভক্তি ও সম্মান তখনই প্রদর্শন করে যখন তার জাহেরী ইজ্জত সম্মান থাকে। যদিও সে ইজ্জত সম্মান দীনের কারণেই হোক। তাই তো বুযুর্গদের মধ্য থেকে ওই বুযুর্গকেই ইজ্জত সম্মান করা হয় যাকে দু’চারজন সম্মান করে। কারণ, তাকে সম্মান করতে এবং তার খেদমতে নিজেকে ছোট করতে লজ্জাবোধ হয় না। এটা নফসের বড় গভীর ও সূ² কূটকৌশল। বাহ্যত তো এই সম্মান ও খেদমতে বড় সৌভাগ্য ও দীনদারী মনে হয়, কিন্তু এতে নফসের কুটিল চাল হলো—সে ওই বুযুর্গকে এ কারণে সম্মান করে যে, এতে লোকদের মাঝে তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একারণেই নফস এই সম্মান ও খেদমত দ্বারা খুশি হয়, কোনো প্রকার দ্বিধা ও লজ্জা অনুভব করে না। তাই তো যদি দু’জন ব্যক্তি উস্তাদ হন, একজন প্রসিদ্ধ আর একজন অপ্রসিদ্ধ তাহলে আমরা নিজেদের প্রসিদ্ধ উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিই। অখ্যাত উস্তাদের শাগরেদ বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ হয়।
লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা বড় মারাত্মক গোনাহ
এজন্যই বুযুর্গানে দীন লিখেছেন, রিয়া ও লৌকিকতা এত মারাত্মক যে, তা অন্তর থেকে সকল রোগের শেষে বের হয়, তবে হ্যাঁ, দুনিয়াদারদের সম্মান যদি নিছক দুনিয়ার কারণে না হয়; বরং তার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য হয় কিংবা তার মনোরঞ্জনের জন্য হয় আর তাতে গরীবের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায় তাহলে তা দূষণীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দীনদারীও নিছক জাহেরী ও বাহ্যিক দীনদারী, খাঁটি নির্ভেজাল দীনদারী আমাদের মধ্যে খুবই কম। আল্লাহ পাক নিজেই বলেন-
وَ قَلِیْلٌ مِّنْ عِبَادِیَ الشَّكُوْرُ
শোকরগোযার বান্দা খুবই কম।
অধিকাংশের দৃষ্টিই জাহের তথা বাহ্যিক অবস্থার উপর অথচ এই বাহ্যিকতাকে বড় করে দেখাটাই হলো দুনিয়া আর এই ধিক্কৃত দুনিয়ার ব্যাপারে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অমর বাণী হলো—গোটা দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ পাকের নিকট একটি মাছির পাখা বরাবরও হতো আল্লাহ তাআলা কোনো কাফেরকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিতেন না। সারকথা হলো-জাহেরী ইজ্জত সম্মান, চাই তা বংশীয় কিংবা অর্থ-সম্পদ বা বিদ্যা-বুদ্ধির সুবাদে অর্জিত হোক। এসবের কারণে যদি দুনিয়াবী সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে এসবই দুনিয়া (আর একেই সূরত ও আকৃতি এবং অর্থ-সম্পদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে) এসবের প্রতি লক্ষ করা উচিত নয়। আর দীন যাকে আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে তার উপর দৃষ্টি থাকা চাই। এমনকি কাউকে যদি ভক্তি ও সম্মান করতে হয় তাহলে তা কেবল দীনের কারণেই করা উচিত।
এজন্যই বুযুর্গানে দীন লিখেছেন, রিয়া ও লৌকিকতা এত মারাত্মক যে, তা অন্তর থেকে সকল রোগের শেষে বের হয়, তবে হ্যাঁ, দুনিয়াদারদের সম্মান যদি নিছক দুনিয়ার কারণে না হয়; বরং তার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য হয় কিংবা তার মনোরঞ্জনের জন্য হয় আর তাতে গরীবের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ না পায় তাহলে তা দূষণীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দীনদারীও নিছক জাহেরী ও বাহ্যিক দীনদারী, খাঁটি নির্ভেজাল দীনদারী আমাদের মধ্যে খুবই কম। আল্লাহ পাক নিজেই বলেন-
وَ قَلِیْلٌ مِّنْ عِبَادِیَ الشَّكُوْرُ
শোকরগোযার বান্দা খুবই কম।
অধিকাংশের দৃষ্টিই জাহের তথা বাহ্যিক অবস্থার উপর অথচ এই বাহ্যিকতাকে বড় করে দেখাটাই হলো দুনিয়া আর এই ধিক্কৃত দুনিয়ার ব্যাপারে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অমর বাণী হলো—গোটা দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ পাকের নিকট একটি মাছির পাখা বরাবরও হতো আল্লাহ তাআলা কোনো কাফেরকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিতেন না। সারকথা হলো-জাহেরী ইজ্জত সম্মান, চাই তা বংশীয় কিংবা অর্থ-সম্পদ বা বিদ্যা-বুদ্ধির সুবাদে অর্জিত হোক। এসবের কারণে যদি দুনিয়াবী সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে এসবই দুনিয়া (আর একেই সূরত ও আকৃতি এবং অর্থ-সম্পদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে) এসবের প্রতি লক্ষ করা উচিত নয়। আর দীন যাকে আমল ও নিয়ত দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে তার উপর দৃষ্টি থাকা চাই। এমনকি কাউকে যদি ভক্তি ও সম্মান করতে হয় তাহলে তা কেবল দীনের কারণেই করা উচিত।
কোনো বুযুর্গের সন্তান হওয়া বা বিশেষ কারও মুরিদ হওয়া মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়
এই হাদীস যাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে নিয়ত ও আমল শব্দে ব্যক্ত করেছেন এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, দীনের ভিত্তি হলো আমলের উপর, কোনো ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নয়। হোক ভালত্ব দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা দীনি দৃষ্টিকোণ থেকে। বর্তমানে বহুলোক এই আত্মপ্রতারণার শিকার যে, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের মুরীদ, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের সন্তান ও বংশধর, তাই আমাদের মুক্তি অনিবার্য। আমাদের নেককাজ করার কোনো দরকার নেই। আল্লাহ পাক এ শ্রেণির লোকদের ধ্যানধারণা রদ করে বলেছেন, ওই সকল মানুষ বিগত হয়ে গেছে তাদেরই জন্য তাদের আমল, আর তোমাদেরই জন্য তোমাদের আমল। তারা কী করত এ নিয়ে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে না। তবে হ্যাঁ, বুযুর্গদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সংস্রবের সুবাদে বরকত লাভ হয় যদি সন্তান ও মুরীদের আকীদা ও আমল ভালো হয়। যদি তাদের আমল ভালো না হয় আকীদা বিশ্বাস সঠিক না হয় তাহলে নিছক বরকত দিয়ে কী লাভ হবে।
বরকতের দৃষ্টান্ত
বরকতের দৃষ্টান্ত হলো চাটনি ও মুরব্বার মতো আর আমলের দৃষ্টান্ত খাদ্যের মতো যা দেহের অংশে পরিণত হয়। মুরব্বা ও চাটনি খাদ্য হজমে অবশ্যই সহায়ক হয় কিন্তু তার সঙ্গে খাদ্য তো থাকতে হবে। যদি খাদ্য না থাকে তাহলে খাবার ছাড়া শুধু মুরব্বা ও চাটনিই কি মেহমানের সামনে পেশ করা যাবে? কিছুতেই না। তদ্রুপ নবী কিংবা অলির সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা আমলে অবশ্যই বরকত হয় কিন্তু নেক আমল ছাড়া নিছক বরকত মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তম কন্যাকে লক্ষ করে বলেন, হে ফাতেমা! নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না। এর অর্থ এই নয় যে, নেক আমল থাকা অবস্থায়ও উচ্চ মর্যাদা লাভে সহায়ক হতে পারবে না কিংবা সুপারিশ করতে পারবে না।
এই হাদীস যাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে নিয়ত ও আমল শব্দে ব্যক্ত করেছেন এতে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, দীনের ভিত্তি হলো আমলের উপর, কোনো ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নয়। হোক ভালত্ব দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা দীনি দৃষ্টিকোণ থেকে। বর্তমানে বহুলোক এই আত্মপ্রতারণার শিকার যে, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের মুরীদ, আমরা অমুক মহান বুযুর্গের সন্তান ও বংশধর, তাই আমাদের মুক্তি অনিবার্য। আমাদের নেককাজ করার কোনো দরকার নেই। আল্লাহ পাক এ শ্রেণির লোকদের ধ্যানধারণা রদ করে বলেছেন, ওই সকল মানুষ বিগত হয়ে গেছে তাদেরই জন্য তাদের আমল, আর তোমাদেরই জন্য তোমাদের আমল। তারা কী করত এ নিয়ে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে না। তবে হ্যাঁ, বুযুর্গদের সঙ্গে সম্পর্ক ও সংস্রবের সুবাদে বরকত লাভ হয় যদি সন্তান ও মুরীদের আকীদা ও আমল ভালো হয়। যদি তাদের আমল ভালো না হয় আকীদা বিশ্বাস সঠিক না হয় তাহলে নিছক বরকত দিয়ে কী লাভ হবে।
বরকতের দৃষ্টান্ত
বরকতের দৃষ্টান্ত হলো চাটনি ও মুরব্বার মতো আর আমলের দৃষ্টান্ত খাদ্যের মতো যা দেহের অংশে পরিণত হয়। মুরব্বা ও চাটনি খাদ্য হজমে অবশ্যই সহায়ক হয় কিন্তু তার সঙ্গে খাদ্য তো থাকতে হবে। যদি খাদ্য না থাকে তাহলে খাবার ছাড়া শুধু মুরব্বা ও চাটনিই কি মেহমানের সামনে পেশ করা যাবে? কিছুতেই না। তদ্রুপ নবী কিংবা অলির সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা আমলে অবশ্যই বরকত হয় কিন্তু নেক আমল ছাড়া নিছক বরকত মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তম কন্যাকে লক্ষ করে বলেন, হে ফাতেমা! নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ পাকের পাকড়াও থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না। এর অর্থ এই নয় যে, নেক আমল থাকা অবস্থায়ও উচ্চ মর্যাদা লাভে সহায়ক হতে পারবে না কিংবা সুপারিশ করতে পারবে না।
নেক আমল থাকলে বুযুর্গদের সন্তান হওয়ার সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়
বুযুর্গদের সঙ্গে বংশগত সম্পর্কের সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হওয়ার কথা স্বয়ং কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করেছে আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের সঙ্গে একত্র করে দেব। আর তাদের সওয়াব থেকে সামান্যতম কমাব না। এর মর্মার্থ হলো—সন্তান-সন্ততির নেক কাজ যদিও ওই পর্যায়ের না হয় যে পর্যায়ের ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের, তবে যদি সন্তান-সন্ততি ও বংশধর ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করে থাকে তাহলে আমি তাদেরকেও পূর্বপুরষদের স্তরে ও মরতবায় পৌঁছে দেব। তো এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়ার সুবাদে তাদেরকেও ওইবুযুর্গদের স্তরে উন্নীত করে দেওয়া হবে। তবে এর কোনো দলিল নেই যে, এ জন্য (বুযুর্গদের স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য) শুধু সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়াই অনিবার্য; বরং এই আয়াতে স্বয়ং ঈমানকে শর্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে (যা দ্বারা বোঝা যায় ঈমানসহ নেক আমলের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ অব্যাহত রাখলে তাদের সন্তান ও বংশধর না হলেও তাদের স্তরে উন্নীত হওয়া যাবে)। আজকাল পীররা নিজেদের দোকান জমজমাট করে রাখা এবং দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে মুরীদদের ধরে রাখার জন্য এই চাল চেলে রেখেছে যে, তোমাদের নেককাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা যা করছি তা-ই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
বুযুর্গদের সঙ্গে বংশগত সম্পর্কের সুবাদে উচ্চ মর্যাদা লাভ হওয়ার কথা স্বয়ং কোরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, যারা ঈমান এনেছে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করেছে আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদের তাদের সঙ্গে একত্র করে দেব। আর তাদের সওয়াব থেকে সামান্যতম কমাব না। এর মর্মার্থ হলো—সন্তান-সন্ততির নেক কাজ যদিও ওই পর্যায়ের না হয় যে পর্যায়ের ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের, তবে যদি সন্তান-সন্ততি ও বংশধর ঈমানসহ তাদের অনুসরণ করে থাকে তাহলে আমি তাদেরকেও পূর্বপুরষদের স্তরে ও মরতবায় পৌঁছে দেব। তো এ কথা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়ার সুবাদে তাদেরকেও ওইবুযুর্গদের স্তরে উন্নীত করে দেওয়া হবে। তবে এর কোনো দলিল নেই যে, এ জন্য (বুযুর্গদের স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য) শুধু সন্তান ও উত্তরপুরুষ হওয়াই অনিবার্য; বরং এই আয়াতে স্বয়ং ঈমানকে শর্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে (যা দ্বারা বোঝা যায় ঈমানসহ নেক আমলের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ অব্যাহত রাখলে তাদের সন্তান ও বংশধর না হলেও তাদের স্তরে উন্নীত হওয়া যাবে)। আজকাল পীররা নিজেদের দোকান জমজমাট করে রাখা এবং দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে মুরীদদের ধরে রাখার জন্য এই চাল চেলে রেখেছে যে, তোমাদের নেককাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা যা করছি তা-ই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
আফসোস পীর-মুরিদির যে উদ্দেশ্য ছিল তা বর্তমানে একেবারে বদলে ফেলা হয়েছে
আফসোস পীর-মুরিদির উদ্দেশ্য ছিল নফস ও আত্মার সংশোধন, নফসকে কষ্ট করানো, যাতে এককভাবে নেক কাজের তাওফীক না হলে পীরের প্রভাবে কিংবা তার তাগাদায় তৌফিক হয়ে যায়। এতে নফসের সংশোধনের কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু বর্তমানে লোকজন একে (পীর-মুরিদি) মানুষের সামনে বেকার-অথর্বে পরিণত করার মাধ্যম বানিয়ে রেখেছে।
আফসোস পীর-মুরিদির উদ্দেশ্য ছিল নফস ও আত্মার সংশোধন, নফসকে কষ্ট করানো, যাতে এককভাবে নেক কাজের তাওফীক না হলে পীরের প্রভাবে কিংবা তার তাগাদায় তৌফিক হয়ে যায়। এতে নফসের সংশোধনের কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু বর্তমানে লোকজন একে (পীর-মুরিদি) মানুষের সামনে বেকার-অথর্বে পরিণত করার মাধ্যম বানিয়ে রেখেছে।
জনৈক দুনিয়াদার পীরের ঘটনা
এমনই এক পীরের ঘটনা বর্ণিত আছে যে, তিনি ভক্ত মুরিদদের এলাকায় গেলেন, দেখতে তাকে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছিল। ভক্ত ও মুরিদরা প্রশ্ন করল পীরজীকে দুর্বল দেখাচ্ছে যে? উত্তরে তিনি বললেন, হতচ্ছারার দল! আমি তো তোদের কারণেই দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করছি। তোমাদের সমস্ত কাজ আমার একার করতে হয়, তোমরা নামায পড় না তোমাদের নামায আমার আদায় করতে হয়, তোমরা রোযা রাখনা তোমাদের রোযা আমার রাখতে হয়, তদুপরি পুলসিরাতের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় যা চুলের চেয়েও চিকন এবং তরাবারির চেয়েও ধারালো। ভক্ত ও মুরিদরা পীরের এই উক্তিতে যারপরনাই আনন্দিত হয়ে স্বগতোক্তি করে বলল বাহ! বাহ! পীর সাহেবই আমাদের কাজ সেরে দেন। আনন্দের আতিশয্যে জনৈক মুরিদ বলল আমার অমুক ফসলি জমি আপনাকে দিয়ে দিলাম। ক্ষেত পেয়ে পীর খুব খুশি হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, ও তো মৌখিকভাবে ক্ষেত দিয়ে দিয়েছে আমি তো বুঝে পাইনি। আবার না তা কেবল মৌখিক লেনদেনে পর্যবসিত হয়, তাই এখনই দখল বুঝে নেওয়া উচিত। ক্ষেত দেখে চিহ্নিত করে নেওয়া দরকার। এ ভাবনা থেকে পীর সাহেব বলল, চৌধুরী সাহেব ক্ষেত দেখিয়ে দাও। কথামতো মুরিদ পীর সাহেবকে সঙ্গে করে ক্ষেত দেখতে নিয়ে চলল। পথ ছিল ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু আইলের। ধান ক্ষেতে পানি ছিল বেশি। ছিল ব্যাঙের উৎপাত। মুরিদ পীরকে এগিয়ে দিল, ক্ষেতের আইল একেতো ছিল সরু তদুপরি পানিতে পিচ্ছিল। তাই পীর সাহেব এক জায়গায় পিছলে পড়ল। মুরিদ পেছন থেকে পীরকে সজোরে লাথি মেরে মন্তব্য করল-আরে! তুই এত মোটা আইলের উপরই চলতে পারিস না, চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়ে ধারালো পুলসিরাতের উপর আবার কী করে চলবি! যা আমি তোকে ক্ষেতই দেব না। মোটকথা বর্তমানের পীররা সাধারণ মানুষের মাথায় এ কথা ভালোভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, যা ইচ্ছে তাই করো সবই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। উক্ত হাদীসের আলোকে এ ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার রদ হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টি দীনের উপর কথাটি এভাবে ব্যক্ত করার পরিবর্তে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, যার দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেছে মুক্তি ও নাজাতের ভিত্তি হলো নেক আমলের উপর। নিয়ত আমলের মধ্যে দাখেল থাকা সত্ত্বেও তা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো যাতে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, স্বয়ং আমলই তখন গ্রহণযোগ্য হয় যখন নিয়ত সঠিক ও বিশুদ্ধ হয়। দ্বিতীয়ত এ কারণেও নিয়ত স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দু’শব্দ দ্বারা দু’দলের সংশোধন উদ্দেশ্য, আমল শব্দটি বেশিরভাগ জনসাধারণের সংশোধনের জন্য, কেননা তারা রাত-দিন দুনিয়ার ধান্ধায় লেগে থাকার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নেক কাজের প্রতি মনোযোগ কম থাকে। তবে তারা অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত তাই তারা খারাপ নিয়ত অর্থাৎ রিয়া-লৌকিকতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত, কারণ তাদেরকে কেউ বুযুর্গ মনে করে না। তাই তাদের মনে এ ধরনের ইচ্ছা থাকে না। আর নিয়ত শব্দের মাধ্যমে অধিকাংশ বিশিষ্টজনদের সংশোধন করেছেন,
এমনই এক পীরের ঘটনা বর্ণিত আছে যে, তিনি ভক্ত মুরিদদের এলাকায় গেলেন, দেখতে তাকে কিছুটা দুর্বল মনে হচ্ছিল। ভক্ত ও মুরিদরা প্রশ্ন করল পীরজীকে দুর্বল দেখাচ্ছে যে? উত্তরে তিনি বললেন, হতচ্ছারার দল! আমি তো তোদের কারণেই দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করছি। তোমাদের সমস্ত কাজ আমার একার করতে হয়, তোমরা নামায পড় না তোমাদের নামায আমার আদায় করতে হয়, তোমরা রোযা রাখনা তোমাদের রোযা আমার রাখতে হয়, তদুপরি পুলসিরাতের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় যা চুলের চেয়েও চিকন এবং তরাবারির চেয়েও ধারালো। ভক্ত ও মুরিদরা পীরের এই উক্তিতে যারপরনাই আনন্দিত হয়ে স্বগতোক্তি করে বলল বাহ! বাহ! পীর সাহেবই আমাদের কাজ সেরে দেন। আনন্দের আতিশয্যে জনৈক মুরিদ বলল আমার অমুক ফসলি জমি আপনাকে দিয়ে দিলাম। ক্ষেত পেয়ে পীর খুব খুশি হলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, ও তো মৌখিকভাবে ক্ষেত দিয়ে দিয়েছে আমি তো বুঝে পাইনি। আবার না তা কেবল মৌখিক লেনদেনে পর্যবসিত হয়, তাই এখনই দখল বুঝে নেওয়া উচিত। ক্ষেত দেখে চিহ্নিত করে নেওয়া দরকার। এ ভাবনা থেকে পীর সাহেব বলল, চৌধুরী সাহেব ক্ষেত দেখিয়ে দাও। কথামতো মুরিদ পীর সাহেবকে সঙ্গে করে ক্ষেত দেখতে নিয়ে চলল। পথ ছিল ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সরু আইলের। ধান ক্ষেতে পানি ছিল বেশি। ছিল ব্যাঙের উৎপাত। মুরিদ পীরকে এগিয়ে দিল, ক্ষেতের আইল একেতো ছিল সরু তদুপরি পানিতে পিচ্ছিল। তাই পীর সাহেব এক জায়গায় পিছলে পড়ল। মুরিদ পেছন থেকে পীরকে সজোরে লাথি মেরে মন্তব্য করল-আরে! তুই এত মোটা আইলের উপরই চলতে পারিস না, চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়ে ধারালো পুলসিরাতের উপর আবার কী করে চলবি! যা আমি তোকে ক্ষেতই দেব না। মোটকথা বর্তমানের পীররা সাধারণ মানুষের মাথায় এ কথা ভালোভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, যা ইচ্ছে তাই করো সবই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। উক্ত হাদীসের আলোকে এ ধ্যান-ধারণা পরিষ্কার রদ হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ তাআলার দৃষ্টি দীনের উপর কথাটি এভাবে ব্যক্ত করার পরিবর্তে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে আল্লাহ পাকের দৃষ্টি আমল ও নিয়তের উপর, যার দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেছে মুক্তি ও নাজাতের ভিত্তি হলো নেক আমলের উপর। নিয়ত আমলের মধ্যে দাখেল থাকা সত্ত্বেও তা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো যাতে এ বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, স্বয়ং আমলই তখন গ্রহণযোগ্য হয় যখন নিয়ত সঠিক ও বিশুদ্ধ হয়। দ্বিতীয়ত এ কারণেও নিয়ত স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দু’শব্দ দ্বারা দু’দলের সংশোধন উদ্দেশ্য, আমল শব্দটি বেশিরভাগ জনসাধারণের সংশোধনের জন্য, কেননা তারা রাত-দিন দুনিয়ার ধান্ধায় লেগে থাকার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের নেক কাজের প্রতি মনোযোগ কম থাকে। তবে তারা অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত তাই তারা খারাপ নিয়ত অর্থাৎ রিয়া-লৌকিকতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত, কারণ তাদেরকে কেউ বুযুর্গ মনে করে না। তাই তাদের মনে এ ধরনের ইচ্ছা থাকে না। আর নিয়ত শব্দের মাধ্যমে অধিকাংশ বিশিষ্টজনদের সংশোধন করেছেন,
যাদের দীনদার মনে করা হয়, যারা সর্বপ্রকার ফরজ ও ওয়াজিব বিধানের
প্রতি যত্নবান, কিন্তু ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা থেকে রিক্তহস্ত। তারা
লোক-দেখানোর জন্য আমল করে তাই তাদের এই দীনদারী বাহ্যিক দীনদারী। খাঁটি ও
প্রকৃত দীনদারী তাদের মধ্যে নেই। এ ধরনের লোকদের মধ্যে লৌকিকতা ও
লোকদেখানোর ব্যাধি থাকে। তো নিয়ত শব্দের মাধ্যমে ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতার
প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তো এর মর্মার্থ হলো-নামায, রোযা,
হজ, যাকাত ও আল্লাহ আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তা যদিও ফায়দা শূন্য নয় তবেব
যে এসবের কিছুই করে না তার তুলনায় হাজার গুণ ভালো। কিন্তু যা মূল উদ্দেশ্য
অর্থ্যাৎ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি, তা তখনই লাভ হবে যখন আমলে
ইখলাস থাকবে অর্থাৎ খালেস আল্লাহর জন্য সবকাজ হবে। কৃত্রিমতা ও লৌকিকতার
লেশমাত্র তাতে না থাকবে।
আমলত্যাগী ও ইখলাসবিহীন আমলকারীর দৃষ্টান্তআর ওই দুই ব্যক্তি যাদের একজন নেককাজ করে কিন্তু আমল ইখলাস শূন্য আর অপর ব্যক্তি যে মোটেই আমল করে না, এ দু’জনের দৃষ্টান্ত হলো-দু’জন ব্যক্তি কোনো রাজদরবারে গেল। একজন উপহারসামগ্রী নিয়ে গেল যদিও ঐ উপহারসামগ্রী রাজদরবারের উপযোগী নয় আর অপর ব্যক্তি যে কোনো উপহারসামগ্রী সঙ্গে নেওয়া ছাড়াই রাজদরবারে গিয়ে হাজির হল- তো উপহারসাগ্রী নিয়ে হাজির হওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে তো এ অভিযোগ করা হবে না যে, কেন কোনো উপহারসামগ্রী নিয়ে এলে না? যেমন অপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থিত হবে যে, কেন কোনো উপহারসামগ্রী নিয়ে এলে না? তো এই দৃষ্টিকোণ থেকে এটুকুই বড় গনিমত। তবে প্রথমোক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে এ অভিযোগ অবশ্যই হবে যে, তোমার উপহারসামগ্রী আমার শান উপযোগী নয়। আর হাদিয়া, উপহার, উপঢৌকনের উদ্দেশ্য হলো সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি, তা-ই যখন লাভ হলো না, তখন উপহার দেওয়া না-দেওয়া সমান। তদ্রুপ এবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা। সুতরাং যে এবাদতে নিয়ত বিশুদ্ধ নয় সে এবাদত হওয়া না-হওয়া বরাবর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন