Translate

Massage for you

Allah is my lord

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬

ঝড়ে পড়লো উজ্জ্বল নক্ষত্র, মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলাম



শেরপুর তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ইল্মে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে যে সব উলামায়ে কিরাম বিশেষ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন শেরপুর জামিয়া সিদ্দীকিয়ার (তেরাবাজার মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠাতা মুহ্তামিম হাফেজ মাওলানা মোঃ নূরুল ইসলাম (রহ.) যিনি এতদঞ্চলে বড় হুজুর নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৪৯ ঈসায়ী সনের আনুমানিক ০১ জানুয়ারি মোতাবেক ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে তদানিন্তন নেত্রকোনা মহকুমার পূর্বধলা থানার ধুবারুহী গ্রামে সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতার নাম ছাহেরা বেগম। পিতা মরহুম আবদুল জব্বার সহজ, সরল, শিক্ষানুরাগী ও ধর্মপরায়ণ লোক ছিলেন এবং তিনি ১৯৬০ সনে ইন্তিকাল করেন।
হাফেজ নূরুল ইসলাম (রহ.) শৈশব হতে লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে পূর্বধলা থানাধীন বালুচরা ফুরকানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতপর তিনি পিতার অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী ঐশী গ্রন্থ আল্-কুরআন হিফ্য শুরু করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া (মাদ্রাসা) হতে ১৯৬৫ ঈসায়ী সনে সুনামের সাথে হিফ্জুল কুরআন সমাপ্ত করে একই মাদ্রাসায় দরসিয়াতে অধ্যয়ন শুরু করে মাত্র ০৪ বছরকাল লেখাপড়া করার পর পারিবারিক সমস্যার কারণে এ মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। তারপর নিজ থানা পূর্বধলার যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় ০৩ বছর (শরহে জামী ও শরহে বেকায়া) অধ্যয়ন করেন। অত:পর দূর্গাপুর থানাধীন চান্দেরনগর দারুল উলুম মাদ্রাসায় ০২ বছর (জালালাইন শরীফ ও মিশকাত শরীফ) অধ্যয়ন করে ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে পুণরায় জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদীস অর্জন করেন।
এ দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে তিনি কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ, ফারাইয প্রভৃতি বিষয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন,- বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্যতম প্রধান আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.), হযরত মাওলানা দৌলত আলী (রহ.), হযরত মাওলানা লোকমান (রহ.), শায়েখে বালিয়া হযরত মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.), শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমদাদুল হক ও হযরত মাওলানা মুফতী মুসলিম উদ্দীন প্রমুখ। সুযোগ্য এ আলিমে দ্বীন ইল্মে যাহিরী শিক্ষা গ্রহণ করার পর ইল্মে বাতিনী চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এ পর্যায়ে তিনি তাজকিয়া নফ্স তথা আত্মশুদ্ধির জন্য মহান সাধক, প্রতিথযশা হাদীস বিশারদ আল্লামা নূরুদ্দীন আহমদ গওহরপুরী (রহ.)’র নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং তাঁর ওফাতের পর শায়েখে বালিয়া আল্লামা গিয়াস উদ্দীন (রহ.) পীর সাহেবের খিদমতে হাজির হয়ে বাতিনী কামালিয়ত হাসিল করার জন্য মনোনিবেশ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি শেরপুর অঞ্চলে আগমন করেন ১৯৭৫ ঈসায়ী সনে রমযান মাসে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী খরমপুর জামে মসজিদে খতমে তারাবীহ্ নামায পড়ানোর জন্য। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মুসুল্লীগণ তার সুললিত কন্ঠের তিলাওয়াত, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান গরিমা ও চরিত্র মাধুযর্তা এবং কর্ম দক্ষতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাকে শেরপুর শহরস্থ মুন্সিবাজার মৌজায় তেরাবাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন। পরে তারই পরামর্শে এবং শেরপুরের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক ইচ্ছানুযায়ী তেরাবাজার মসজিদের পাশে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু জায়গা না থাকার দরুণ প্রাথমিকভাবে এই মসজিদের বারান্দায় ১৯৭৮ ঈসায়ী সনে তিনি হিফ্য বিভাগের মাধ্যমে ছাত্রদের র্দস দান শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আশাতীতভাবে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদ্রাসার নিজস্ব ঘরের প্রয়োজন দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই একদিন প্রচন্ড ঝড়ে মসজিদ সংলগ্ন বাজারটি তছনছ করে ফেলে। এ অবস্থায় বড় হুজুর স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে তদানীন্তন আবাসিক প্রশাসক আবদুর রশিদ সাহেবের সহযোগিতায় বাজারটির আংশিক জায়গা (অর্পিত পরিত্যক্ত জমি) নিয়ে মাদ্রাসার জন্য একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণ করেন। শক্তিশালী কার্যনির্বাহী পরিষদ, এলাকাবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং এই আলিমে দ্বীনের সততা, কর্মদক্ষতা, কঠোর সাধনা এবং আল্লাহর অশেষ রহমতের ফলে পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসাটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদীস ক্লাস পর্যন্ত উন্নীত হয়। এই ছোট্ট মাদ্রাসাটিই বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া সিদ্দীকিয়া (তেরাবাজার মাদ্রাসা) নামে পরিচিত এবং যেটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করে গোটা শেরপুরবাসীর গৌরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন গত ৪০ বছর যাবৎ অত্র জামিয়ার মুহ্তামিম পদে অধিষ্ঠিত থেকে পাঠদান থেকে শুরু করে মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে অত্র অঞ্চলের অধিবাসীদের হিদায়াতের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন ধর্মসভায় ওয়াজ নসিহত, বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে হিদায়েতি বক্তব্য, বাতিল বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম ও লেখনীর মাধ্যমে আমৃত্যু ইসলামের খিদমত করে গত ২১ মে রোজ শনিবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে আল্লাহর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান (ইন্নালিল্লাহি……….রাজিউন)। মরহুমের শেরপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের জানাযা নামাযে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত স্মরণকালের সবচেয়ে বেশী পরিমাণ মুসুল্লীর ঢল দেখে সহজেই অনুমান করা যায় তিনি কতটা মানবহিতৈষী, দ্বীনের খেদমতদার ও আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন। আমরা তাঁর বিদেহী রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
বিস্তারিত: www.facebook.com/hafej.minhaz.1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন